দীর্ঘ তিন দশকেরও বেশি সময় পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ৭ম কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচন।
আগামীকাল বুধবার, ১৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। একই দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪টি আবাসিক হল সংসদের নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে বিরাজ করছে উৎসবমুখর পরিবেশ। তবে যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসন থেকে নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদ প্রার্থী
এবারের নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ও হল সংসদ মিলিয়ে মোট ৯০৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪১৫ জন। সহসভাপতি (ভিপি) পদে ২৪ জন, সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ২২ জন, সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) পদে ২১ জন, খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে ১২ জন, সহ-খেলাধুলা ও ক্রীড়া সম্পাদক ১৪ জন, সাহিত্য-সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৭ জন, সহ-সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক পদে ১৫ জন, দফতর সম্পাদক ১৭ জন, সহ-দফতর সম্পাদক ১৪ জন, ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ১৩ জন, সহ-ছাত্রীকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক ১০ জন, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তি সম্পাদক ১১ জন, গবেষণা ও উদ্ভাবন সম্পাদক ১২ জন, সমাজসেবা ও পরিবেশ সম্পাদক ২০ জন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ১৫ জন, মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ১৭ জন, ক্যারিয়ার ডেভেলপমেন্ট ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ১৬ জন, যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক ১৭ জন, সহ-যোগাযোগ ও আবাসন বিষয়ক সম্পাদক ১৪ জন, আইন ও মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ৯ জন এবং পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া বিষয়ক সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২০ জন। এছাড়া নির্বাহী সদস্য পদে রয়েছেন ৮৫ জন প্রার্থী।
অন্যদিকে, ১৪টি হল সংসদের ২০৬টি পদে লড়ছেন ৪৭৩ জন প্রার্থী। ছাত্রদের ৯টি হল ও একটি হোস্টেলে মোট প্রার্থী ৩৫০ জন এবং ছাত্রীদের পাঁচটি হলে প্রার্থী ১২৩ জন। ছেলেদের হলগুলোর মধ্যে এএফ রহমান হলে ৩৮ জন, আলাওল হলে ৩২ জন, অতীশ দীপংকর হলে ৩৭ জন, শাহ আমানত হলে ৪৩ জন, শহীদ ফরহাদ হোসেন হলে ৪৫ জন, মাস্টারদা সূর্যসেন হলে ৩৭ জন, শহীদ আব্দুর রব হলে ৩১ জন, শাহজালাল হলে ৩৪ জন এবং সোহরাওয়ার্দী হলে ৫৩ জন প্রার্থী রয়েছেন। এছাড়া শিল্পী রশিদ চৌধুরী হোস্টেল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২০ জন। ছাত্রীদের হলগুলোর মধ্যে বিজয়-২৪ হলে ২৮ জন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলে ৩০ জন, নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ১৭ জন, প্রীতিলতা হলে ২৬ জন এবং শামসুন্নাহার হলে ২২ জন প্রার্থী রয়েছেন।
প্রধান প্যানেল
চাকসুতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ছোট-বড় ১০টি প্যনেল। এর মধ্যে প্রধান প্যনেলগুলো হলো ছাত্রশিবির-সমর্থিত 'সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট', বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ‘ছাত্রদল প্যানেল’, স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (স্যাড) ও ছাত্র ফেডারেশন সমর্থিত ‘বিনির্মান মান শিক্ষার্থী ঐক্য’, বামপন্থি ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, পাহাড়ি সংগঠনসহ মোট ১০টি ছাত্র সংগঠন মিলে গঠন করেছে 'বৈচিত্র্যের ঐক্য' প্যানেল, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন সমর্থিত 'সচেতন শিক্ষার্থী সংসদ' প্যানেল।
এছাড়া বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের (বাগছাস) দুই নেতা ও জুলাই আন্দোলনকারী ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত হয়েছে 'স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন', অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে গঠিত 'সার্বভৌম শিক্ষার্থী ঐক্য' প্যানেল, ছাত্র অধিকার পরিষদ ও ইসলামী ছাত্র মজলিস সমর্থিত 'চাকসু ফর র্যাপিড চেঞ্জ' প্যানেল। অপরদিকে, ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের যৌথ উদ্যোগে গঠিত হয়েছে 'দ্রোহ পর্ষদ' প্যানেল এবং সুফি ঘরনার শিক্ষার্থীদের 'অহিংস শিক্ষার্থী ঐক্য' প্যানেল।
ভোটার ও ভোটগ্রহণ
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ২৭ হাজার ৫১৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১৬ হাজার ১৮৯ জন এবং নারী ভোটার ১১ হাজার ৩২৯ জন। প্রতিটি ভোটার চাকসুতে কেন্দ্রীয় সংসদের ২৬টি এবং নিজ নিজ হলে ১৪টি— মোট ৪০টি ভোট দিতে পারবেন। ব্যালট পেপারের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবং গণনা করা হবে অপটিক্যাল মার্ক রিডার (ওএমআর) পদ্ধতিতে। এই পদ্ধতিতে ব্যালটে একটি ২৪ অঙ্কের নিরাপত্তা কোড ও একটি গোপন কোড থাকবে, যা ভোটের গোপনীয়তা নিশ্চিত করবে এবং দ্রুত ফলাফল প্রকাশে সহায়তা করবে।
ভোট গ্রহণের জন্য পাঁচটি অনুষদ ভবনের ১৫টি কেন্দ্রে ভোটকক্ষ স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সুবিধার্থে চাকসু ভবনে একটি অতিরিক্ত কেন্দ্র রাখা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে ৫০০ জন ভোটার ভোট দেবেন এবং ব্যবহৃত হবে ৬৫ থেকে ৭০টি কক্ষ। প্রতিটি কক্ষে থাকবে পাঁচটি ব্যালট বাক্স ও সর্বোচ্চ পাঁচজন এজেন্ট। গোপন কক্ষ ছাড়া সব কেন্দ্রে বসানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা
নির্বাচনের সার্বিক নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে দেড় হাজারেরও বেশি নিরাপত্তাকর্মী। দায়িত্ব পালন করছেন পুলিশের পাশাপাশি র্যাবের আটটি ব্যাটালিয়ন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বাহিনী, বিএনসিসি, রোভার স্কাউট ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা। পাঁচটি অনুষদে দায়িত্বে থাকবেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এবং স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রস্তুত থাকবে সেনাবাহিনী। প্রশাসন জানিয়েছে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সবধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
ভোটগ্রহণ শেষে কেন্দ্রীয় সংসদের ফলাফল ঘোষণা করা হবে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ ভবন থেকে এবং হল সংসদের ফলাফল ঘোষণা করা হবে নিজ নিজ ভোটকেন্দ্র থেকে। ওএমআর মেশিনে দ্রুত গণনার ফলে ভোটের রাতেই প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশের সম্ভাবনা রয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। দীর্ঘ ৩৫ বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। এখন অপেক্ষা আগামীকালের ভোটের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার।
সিটিজিপোস্ট/জাউ
১৬ অক্টোবর, ২০২৫
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ইব্রাহিম হোসেন রনি এবং জিএস পদে সাঈদ বিন হাবিব এছাড়াও এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন আইয়ুবুর রহমান তৌফিক । এরমধ্যে শীর্ষ দুইপদ ভিপি, জিএস ছাত্রশিবির সমর্থিত প্যানেল থেকে এবং এজিএস ছাত্রদল সমর্থীত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার...
১৫ অক্টোবর, ২০২৫
১৫ অক্টোবর, ২০২৫
১৫ অক্টোবর, ২০২৫
১৫ অক্টোবর, ২০২৫
১৬ অক্টোবর, ২০২৫
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ভাইস প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে নির্বাচিত হয়েছেন ইব্রাহিম হোসেন রনি এবং জিএস পদে সাঈদ বিন হাবিব এছাড়াও এজিএস পদে নির্বাচিত হয়েছেন আইয়ুবুর রহমান তৌফিক । এরমধ্যে শীর্ষ দুইপদ ভিপি, জিএস ছ...