দীর্ঘদিন ধরেই ভয়াবহ ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) সংকটে ভুগছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ফলে সিডিউল বিপর্যয় থেকে শুরু করে ট্রেন বন্ধ থাকা, ঘন্টার পর ঘন্টা ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করা সহ নানা ধরণের ভোগান্তিতে পড়তে হয় সাধরণ যাত্রীদের। এছাড়াও এই সংকটের প্রভাব পড়ে বিভিন্ন রুটে চলাচলরত ট্রেনের উপরও।
রেল সূত্রে জানা যায়, রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে বর্তমানে যে কয়টি ইঞ্জিন আছে তার ৬০ শতাংশই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। এই সকল মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জিনের বেশির ভাগেরই নেই বিদ্যুৎ সংযোগ, রয়েছে সেন্সর সমস্যা, গতি কমে যাওয়া সহ বিভিন্ন ধরণের যান্ত্রিক ত্রুটি। পাশাপাশি চলতি পথে ইঞ্জিন বিকল হওয়া ও আগুন লাগার ঘটনাও ঘটেছে বহুবার।
ট্রেনের সিডিউল ঠিক রাখতে পূর্বাঞ্চল রেলে প্রতিদিন ১১৬টি ইঞ্জিনের (লোকোমোটিভ) প্রয়োজন হলেও বর্তমানে চালু আছে মাত্র ৫০ থেকে ৫৫ টি। বাকিগুলো দেশের বিভিন্ন ডক ইর্য়াড ও ওয়ার্ক শপে পড়ে আছে বিকল অবস্থায়।
এই সংকট মোকাবেলায় ২০২১ সালের আগস্ট মাসে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ২৯৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০০০ সিরিজের ১০টি ইঞ্জিন আনা হয়। পরে আবারো অন্য এক প্রকল্পের মাধ্যমে ৮৪১ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩০০০ সিরিজের আরো ২০টি ইঞ্জিন আনা হয়। এরমধ্যে ২২টি ইঞ্জিন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল পেলেও বর্তমানে সচল রয়েছে মাত্র ১২টি।
এদিকে চট্টগ্রাম বিভাগে সচল থাকা ১২টি ইঞ্জিনের মধ্যে ৮টি ইঞ্জিনের দুটি করে মোটর নষ্ট। ফলে ইঞ্জিনগুলো প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করতে পারে না। ট্রেন চালু করার পর গতি সঞ্চারে সময় লাগে প্রায় আধাঘণ্টা এবং চলার গতি সর্বোচ্চ মাত্র ৫০ কিলোমিটার।
প্রায় ১১শ ৩৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ক্রয় করা এসব ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের অভাবে এখন অকেজো হওয়ার পথে।
অভিযোগ রয়েছে, মেরামতের সময় নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হওয়ায় দ্রুত ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ছে। ঠিকাদার ও কারখানার মেকানিকদের যোগসাজশে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করার কারণেই এসব সমস্যা বারবার ফিরে আসছে।
তবে রেলওয়ের সরঞ্জাম ও মেকানিক্যাল বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বিদেশ থেকে যন্ত্রাংশ আমদানিতে দীর্ঘসূত্রতা ও এলসি জটিলতার কারণে এই সকল বিকল হওয়া ইঞ্জিন মেরামতে বিলম্ব হচ্ছে।
ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে বেশ কিছু লোকাল ও মেইল ট্রেন
এদিকে ইঞ্জিন সংকটের কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করা বেশ কিছু লোকাল ও মেইল ট্রেন বন্ধ রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনটি বন্ধ রয়েছে বেশ কয়েক বছর ধরেই। এছাড়াও সম্প্রতি সুরমা মেইল, ঢাকা/নোয়াখালী এক্সপ্রেস ও ভাওয়াল এক্সপ্রেস ট্রেনও সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
চলতি পথে ইঞ্জিন বিকল- বিলম্ব ট্রেন
রেলে বর্তমানে ৬০ শতাংশ ইঞ্জিনই এখন মেয়াদোত্তীর্ণ। যে কয়টি চলছে তাও বেশ জরাজীর্ণ। চলতি পথে ইঞ্জিন বিকল হওয়া ও আগুন লাগার ঘটনাও ঘটেছে বহুবার। চলতি মাসের শেষ ১০ দিনেই চলতি পথে ইঞ্জিন নষ্ট হয়েছে ১৫ বারের বেশি।
গত ২১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া মহানগর গোধূলি ট্রেন চলতি পথে ইঞ্জিন বিকল হয়ে নাঙ্গলকোট স্টেশনেই আটকে পড়ে। ইঞ্জিন সংকটের কারণে এ ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাতে বিলম্ব হয় ৫ ঘণ্টার বেশি।
একইভাবে ২৬ জুলাই একদিনেই ময়মনসিংহ বিভাগে ছয়টি ট্রেন চলতি পথে বিকল হয়- তিস্তা এক্সপ্রেস, বিজয় এক্সপ্রেস, জামালপুর কমিউটার, ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ও যমুনা এক্সপ্রেস। প্রতিটি ট্রেন গড়ে সাড়ে তিন থেকে পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে গন্তব্যে পৌঁছায়।
অপরদিকে ২৮ জুলাই ঢাকাগামী তুর্ণা এক্সপ্রেসের জন্য ইঞ্জিন না থাকায়, তাৎক্ষণিকভাবে সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ইঞ্জিন তড়িঘড়ি রেডি করে তুর্ণা এক্সপ্রেসে দেওয়া হয়। ফলে তুর্ণা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম ছেড়ে যায় এক ঘণ্টা দেরিতে।
এমন সিডিউল বিপর্যয়ে ভোগান্তিতে পড়া রকিবুল হাসান নামের একজন যাত্রী বলেন, আমি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে প্রায় সময় ট্রেনে যাতায়াত করি। তবে প্রায় সময় ট্রেনের অপেক্ষায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকবে হয়। কেন দেরি হচ্ছে বা ট্রেন কখন আসবে জানতে চাইলে এর জবাব কেউ দিতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, সময় মতো ট্রেন আসা যেন এখন ভাগ্যের বিষয়।
এ ব্যাপারে রেলওয়ে এক্টিভিস্ট নাজিব আহমদ সিটিজি পোস্টকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই রেলওয়ের এমন অব্যবস্থাপনা দেখছি। রেলওয়ের মূল চালিকাশক্তি ইঞ্জিনের পিছে নজর দেওয়ার বদলে এখানে-সেখানে অন্যান্য প্রজেক্টে বিস্তর অর্থ ঢালা হয়েছে। ইঞ্জিনের (লোকোমোটিভ) সমস্যা রেলওয়ের সকল অফিসাররাই জানেন, কিন্তু সমস্যা সমাধানে কারোর কোন আগ্রহ দেখি না, কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখি না। রেলে ইঞ্জিন নেই, কোচ নেই, জনবল সংকট, নেই দীর্ঘমেয়াদি কোন সমাধানও। যেন রেলকে দেখার কেউ নেই।
তিনি আরো বলেন, ৩০০০ সিরিজ রেলওয়ের বহরে যুক্ত হওয়া সর্বশেষ সবচেয়ে আধুনিক মিটারগেজ ইঞ্জিন, যার সর্বমোট ৩০টি ইঞ্জিনের মধ্যে ১৪টিই এখন বিকল হয়ে পড়ে আছে। ক্রয়ের সময় এই ইঞ্জিনের জন্য কোন স্পেয়ার পার্টস আনা হয়নি, যার ফলে এই ইঞ্জিনের কোন যন্ত্রাংশে সমস্যা হলে সেটি রিপ্লেস করা যাচ্ছে না।
এছাড়াও নাজিব আহমদ বলেন, লোকোমোটিভের সবচেয়ে বড় মেরামত কারখানা পার্বতীপুরে অবস্থিত। এই কারখানায় কোন লোকোমোটিভ পাঠালে সেটির অবস্থা আরও খারাপ হয়ে আসে। ২৯০০ সিরিজের বেশিরভাগ লোকোমোটিভ জেনেরাল ওভারহলিংয়ের পর আরও বাজে কন্ডিশনে ফেরত এসেছে। অনেক লোকোমোটিভ কারখানা থেকে বের হওয়ার কয়েকদিনের মাথায় আবারো বিকল হয়ে পড়েছে। সত্যিকার অর্থে যেটা ইঞ্জিনের ডাক্তারখানা, সেখান থেকে ইঞ্জিন সুস্থ না হয়ে বরং অসুস্থ হয়ে ফিরে আসে। আর জনবলের অভাব তো নতুন কিছু নয়।
রেল সূত্রে জানা যায়, ওয়াটার পাইপ লিক, ওভারহিট, জেনারেটর ব্লোয়ার মোটর জ্বলা, কাপ্লিং ভাঙা, লোড মিটার নষ্ট হওয়ার কারণে চলতি পথে ইঞ্জিন বিকল হওয়ার ঘটনা ঘটে।
রেলওয়ের একজন লোকো মাষ্টার (ট্রেনের ড্রাইভার/চালক) নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটিজি পোস্টকে বলেন, দৈনিক কমপক্ষে ১০০ টি ইঞ্জিনের প্রয়োজন, তবে চলে মাত্র ৫০-৫৫টি। ফলে ব্যাপক সিডিউল বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। অনেক লোকাল ও মেইল ট্রেন বন্ধ করে দিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এভাবে চলতে থাকলে আন্তঃনগর ট্রেনগুলো বন্ধ হতে বেশি দিন সময় লাগবে না।
তিনি আরও বলেন, যে রেল একসময় দেশকে যুক্ত করত, আজ তা বিচ্ছিন্নতার প্রতীক!
ইঞ্জিন সংকট ও সিডিউল বিপর্যয়ের ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিঃ মহাপরিচালক (রোলিং স্টক) আহমেদ মাহবুব চৌধুরী সিটিজি পোস্টকে বলেন, চাহিদা অনুযায়ী যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও রেলওয়ের নিজস্ব কিছু জটিলতা রয়েছে, তাই একই সমস্যা বারবার ফিরে আসছে।
তবে বাংলাদেশ রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মো. সুবক্তগীন সিটিজি পোস্টকে বলেন, ইঞ্জিন সংকটের প্রভাবে কিছুটা সিডিউল বিপর্যয় ঘটলেও এই সমস্যা বেশি দিন থাকবে না। বেশকিছু যন্ত্রাংশের অর্ডার করা হয়েছে, বাজেট হলে নতুন ইঞ্জিনও কেনা হবে। আশা করছি আগামি তিন-চার মাসের মধ্যে এই সমস্যা অনেকটাই সহনিয় পর্যায়ে চলে আসবে।
৩১ জুলাই, ২০২৫
আগামী ৩ আগস্ট রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি সবাইকে ঐ দিন শহীদ মিনারে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা সাথে থাকলে, আমরা আমাদের সকল দাবি আদায় করেই ছাড়ব।’বুধবার (৩০ জুলাই) নাহিদ ইসলাম এ ঘোষণা দেন নরসিংদী শহরের পৌরসভার সামনে আয়োজিত এক প...
৩১ জুলাই, ২০২৫
৩০ জুলাই, ২০২৫
৩০ জুলাই, ২০২৫
৩০ জুলাই, ২০২৫
৩০ জুলাই, ২০২৫
৩১ জুলাই, ২০২৫
আগামী ৩ আগস্ট রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নতুন বাংলাদেশের ইশতেহার ঘোষণা করা হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি সবাইকে ঐ দিন শহীদ মিনারে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আপনারা সাথে থাকলে, আমরা আমাদের সকল দা...