নওফেল এতদিন তার পিতার দ্বিতীয় স্ত্রী হাসিনা মহিউদ্দিনের নামই মা হিসেবে সরকারি নথিপত্রে উল্লেখ করে আসছিলেন। তবে শুক্রবার (২৭ জুন) একটি ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, "আমার মা বোমা বিস্ফোরণে মারা গিয়েছিলেন, বাবা বছরের পর বছর জেলে ছিলেন। এই দলের (আওয়ামী লীগ) জন্য আমার বোন বিনা চিকিৎসায় ক্যান্সারে মারা গেছে।"

নওফেলের এই বক্তব্যে স্পষ্ট হয় যে, তিনি অবশেষে তার জন্মদাত্রী মা মরহুমা শাহেদা আক্তার ওরফে শাহেদা মহিউদ্দিনকে স্বীকার করেছেন। জানা গেছে, শাহেদা মহিউদ্দিন ছিলেন সেন্ট প্লাসিডস স্কুলের শিক্ষিকা। ১৯৮২ সালে চট্টগ্রামের তৎকালীন মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে তার বিয়ে হয়। তাদের ঘরে ১৯৮৩ সালের ২৬ জুলাই মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের জন্ম হয়।

১৯৮৬ সালের ১৯ অক্টোবর চট্টগ্রামে এক বোমা বিস্ফোরণে শাহেদা মহিউদ্দিন নিহত হন। একই ঘটনায় মারা যান এক গৃহকর্মীও। ঘটনার সময় নওফেলের বয়স ছিল তিন বছর।

পরবর্তীতে ১৯৮৭ সালে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী দ্বিতীয় বিয়ে করেন হাসিনা মহিউদ্দিনকে। নওফেল সেই সময় থেকেই তাকে মা হিসেবে পরিচয় দিয়ে আসছিলেন।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম-৯ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সানজীদ রশীদ চৌধুরী অভিযোগ করেন, নওফেল মনোনয়নপত্রে মায়ের নাম ও ঠিকানা নিয়ে মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। অভিযোগে বলা হয়, তিনি জন্মদাত্রী মাকে অস্বীকার করে পিতার দ্বিতীয় স্ত্রীর নাম লিখেছেন যা সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী।

তবে নির্বাচন কমিশন ওই অভিযোগ গ্রহণ করেনি এবং তার প্রার্থিতা বহাল থাকে।
সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত নওফেল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত এক ভিডিওতে বলেন, “আমার নিজের মা বিস্ফোরণে মারা গিয়েছিলেন।” তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই জন্মদাত্রীকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, আবার অনেকে এতদিন মাকে অস্বীকার করার কারণে সমালোচনা করছেন।

একই ভিডিওতে নওফেল বলেন, “আমার বোন বিনা চিকিৎসায় মারা গেছে।” তবে পারিবারিক সূত্র জানায়, তার বোন ফৌজিয়া সুলতানা টুম্পা ২০০৮ সালে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ক্যান্সারের চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

নওফেল বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। তার স্ত্রী এমা ক্লেয়ার বার্টন একজন ব্রিটিশ নাগরিক এবং তিনিও ব্রিটিশ নাগরিকত্বধারী। রাজনৈতিক পরিস্থিতি উত্তপ্ত হওয়ার পর তিনি ভারতে গিয়েছিলেন, সেখান থেকে লন্ডনে পাড়ি জমান।