সাক্ষাৎকারে কাদের বলেন, “৫ই আগস্ট যেদিন ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান ঘটে, সেদিন আমি নিশ্চিত ছিলাম, আমার মৃত্যু অবধারিত। নিজ বাসা ছেড়ে পাশের একটি বাসায় আশ্রয় নিই। কিন্তু সেখানেও মিছিলের ধাক্কা আসে। বাসায় হামলা করে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় বিক্ষুব্ধ জনতা। আমি এবং আমার স্ত্রী প্রায় ৫ ঘণ্টা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলাম। তারা এমনকি বাথরুমের বেসিন ও কমোড পর্যন্ত ভেঙে নেয়।”

তিনি বলেন, “আমার স্ত্রী বাইরে দাঁড়িয়ে বলছিলেন আমি অসুস্থ। তারপরও ওরা বাথরুমে ঢুকে পড়ে। আমাকে দেখে সেলফি তুলতে শুরু করে, তারপর আচরণ কিছুটা নরম হয়। কেউ কেউ চেয়েছিল আমাকে সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতে, আবার কেউ জনতার হাতে। তবে সৌভাগ্যক্রমে কিছু ছাত্র আমাকে চেনার কারণে বাঁচিয়ে দেয় এবং একটা ইজিবাইকে করে আমাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেয়।”

ওবায়দুল কাদের জানান, এরপর তিন মাস বাংলাদেশেই ছিলেন এবং শ্রমিকদের ক্ষোভ পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি বলেন, “আমি ভাবছিলাম গার্মেন্টস শ্রমিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কিছু করা যায় কিনা। কিন্তু একের পর এক সবাই গ্রেফতার হচ্ছিল। আমার বিরুদ্ধেও শতাধিক মামলার তালিকা তৈরি হয়েছিল।”

সাবেক সেতুমন্ত্রী জানান, তিনি অতীতে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরে ৯ মাস কলকাতায় ছিলেন। এবারও চিকিৎসার অজুহাতে দেশ ত্যাগ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, অভ্যুত্থানের সময় ছাত্রলীগকে মাঠে নামানোর কোনো নির্দেশনা তিনি দেননি। বরং সেই অভিযোগটি লন্ডনে থাকা একজন আইনজীবীর ইউটিউব ভিডিও থেকে এসেছে বলে দাবি করেন।

নেতৃত্বের ব্যর্থতা প্রসঙ্গে কাদের বলেন, “এটা আকস্মিক বিস্ফোরণ ছিল, শুরু কোটা আন্দোলন দিয়ে, শেষ এক দফা দাবিতে। গোয়েন্দা ব্যর্থতা অবশ্যই ছিল। আমি সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করেছি, ভুল-ত্রুটি হতে পারে, তবে আমি চাঁদাবাজি বা কমিশন খাওয়া ধরনের কোনো কাজ করিনি।”

জনগণের বিপুল ক্ষোভ, দমন-পীড়ন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে কাদের বলেন, “আমরা দেশকে যা দিয়েছি, সেটা তুলনার ঊর্ধ্বে। যারা অন্ধ, তারাই কেবল সমালোচনা করে। সময় আসলে দেশের মাটিতে সবকিছুর মূল্যায়ন হবে।”

সাক্ষাৎকারের শেষদিকে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রসঙ্গেও কথা বলেন কাদের। নিজের দীর্ঘ নীরবতা প্রসঙ্গে বলেন, “আমাকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিজেই খুঁজেছেন। আমার অসুস্থতা নিয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি চিন্তিত ছিলেন।”