জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন কর্মকর্তাদের লাগাতার শাটডাউন কর্মসূচির প্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। এতে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাস কার্যক্রমে চরম অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।
শনিবার সকাল ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির ফলে কাস্টমসের সব ধরনের কার্যক্রম—পণ্যের শুল্কায়ন, বিল অব এন্ট্রি দাখিল, স্ক্যানিং এবং ছাড়পত্র প্রদান—বন্ধ রয়েছে। বন্দরে পণ্য হ্যান্ডলিং কার্যক্রম বন্ধ না হলেও নতুন করে কোনো জাহাজের নিবন্ধন হয়নি এবং আগে অনুমোদনপ্রাপ্ত চালান ছাড়া অন্য পণ্য খালাসও বন্ধ রয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কাস্টমস কার্যক্রম চালু না হলে বন্দর কার্যক্রমও স্থবির হয়ে পড়বে। এক কর্মকর্তার ভাষায়, “চট্টগ্রাম বন্দর নিজে পণ্য খালাস করতে পারে না। কাস্টমস প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হলে পণ্য আনলোড বা ডেলিভারি সম্ভব নয়।”
এ অবস্থায় বহির্নোঙরে থাকা জাহাজগুলোর সংখ্যা বাড়ছে, যার ফলে বন্দরে কন্টেনারজট এবং জাহাজজটের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আমদানি পণ্য আটকে থাকায় সরবরাহব্যবস্থাও হুমকির মুখে পড়েছে।
রাজস্ব ব্যবস্থায় কাঠামোগত পরিবর্তনের অংশ হিসেবে সরকার এনবিআরকে ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ ও ‘রাজস্ব নীতি’ নামে দুটি বিভাগে ভাগ করে অধ্যাদেশ জারি করে। এই অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে এনবিআরের অধীন বিভিন্ন কর, ভ্যাট ও কাস্টমস কর্মকর্তারা কলম বিরতি ও পরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি শুরু করেন।
আন্দোলনকারীদের প্রধান দাবি এনবিআর চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুর রহমান খানকে অপসারণ এবং পরিবর্তনের পূর্বে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। আন্দোলনের অংশ হিসেবে এনবিআর কার্যালয়ে চেয়ারম্যানকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। বর্তমানে তিনি নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় অফিস করছেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহসভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী বলেন, “বন্দরে কন্টেনারজট ও চারগুণ বেশি রেন্ট আদায়ের ফলে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। ফলে বাজারে দ্রব্যমূল্য বাড়ছে এবং শিল্প–বাণিজ্যে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “গত দেড় মাস ধরে চলমান এই প্রাতিষ্ঠানিক অচলাবস্থা দেশের অর্থনীতিকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। ব্যবসায়ীরা উৎপাদন ও রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনায় অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।”
বন্দর-নির্ভর আমদানি–রপ্তানির ৯২ শতাংশ চট্টগ্রাম বন্দরের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। কাস্টমস প্রক্রিয়া বন্ধ থাকলে দিনপ্রতি ক্ষতির পরিমাণ কয়েকশ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন শিপিং ও বন্দর বিশেষজ্ঞরা।
তারা সতর্ক করে বলেন, “জাহাজজট বেড়ে গেলে আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানিগুলো বাংলাদেশগামী রুট থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারে। এতে দেশের বৈদেশিক বাণিজ্য মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে।”