অভিজ্ঞতা ও বয়স জালিয়াতির অভিযোগ সিডিএর ঈসা আনছারীর বিরুদ্ধে
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (সিডিএ) অবৈধ নিয়োগ, পদোন্নতি ও চলতি দায়িত্বকে ঘিরে দীর্ঘদিনের অনিয়মের অভিযোগে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছেন ভারপ্রাপ্ত উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আবু ঈসা আনছারী। প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীন একটি নিয়োগ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি সুবিধাভোগী হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
নথি অনুযায়ী, আবু ঈসা আনসারী ২০০৫ সালের ২ এপ্রিল সিডিএর “প্রিপারেশন অব ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান ফর চিটাগাং মেট্রোপলিটন মাস্টার প্ল্যান” প্রকল্পে ছয় মাসের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষানবিশ নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে যোগ দেন। পরে ২০০৭ সালের ১০ জুলাই দৈনিক পূর্বকোণে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ পদে আবেদন করেন। বিজ্ঞপ্তিতে যোগ্যতা হিসেবে নগর পরিকল্পনায় স্নাতক ডিগ্রী এবং বয়স সর্বোচ্চ ৩০ বছর চাওয়া হয়েছিল।
প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ৩০ জুলাই আবেদন করার সময় আবু ঈসা আনসারী তার জীবনবৃত্তান্তে বয়স উল্লেখ করেন ৩০ বছর ২২ দিন। অভিজ্ঞতার অংশে তিনি দাবি করেন ২০০৫ সালের ২ এপ্রিল থেকে সিডিএর বাস্তবায়নাধীন ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান প্রকল্পে টাউন প্ল্যানার হিসেবে কর্মরত আছেন। একই বছরের ২২ নভেম্বর তিনি চুক্তিভিত্তিক সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে “অনন্যা আবাসিক প্রকল্পে” নিয়োগ পান।
এর এক বছর পর ২০০৮ সালের ২৭ জুলাই সিডিএ আবার নতুন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে নগর পরিকল্পনাবিদসহ বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য। সেখানে শর্ত দেওয়া হয় নগর পরিকল্পনা বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রিধারী হতে হবে, সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা হিসেবে কমপক্ষে ছয় বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং বয়স ন্যূনতম ৩৫ বছর হতে হবে।
তবে শর্ত ভঙ্গ করে আবু ঈসা আনসারী ওই পদে আবেদন করেন। ২০০৮ সালের ১০ আগস্ট জমা দেওয়া জীবনবৃত্তান্তে তিনি বয়স দেখান ৩১ বছর ১৫ দিন এবং অভিজ্ঞতার অংশে দেখান সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ৬ বছর ১৫ দিন কাজের অভিজ্ঞতা। অথচ প্রকৃতপক্ষে সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে তার অভিজ্ঞতা ছিল মাত্র ৩ বছর ৩ মাস। রহস্যজনক কারণে তৎকালীন নিয়োগ বোর্ড এসব তথ্য এড়িয়ে যায়। এর ভিত্তিতেই তিনি ২০০৮ সালের ২০ নভেম্বর নগর পরিকল্পনাবিদ পদে অস্থায়ীভাবে নিয়োগ পান।
অভিজ্ঞতার বিবরণে তিনি উল্লেখ করেন, ২০০৭ সালের ২২ নভেম্বর থেকে “অনন্যা আবাসিক প্রকল্পে” সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত। ২০০৮ সালের ৭ এপ্রিল থেকে একই প্রকল্পে প্রকল্প ব্যবস্থাপকের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন। ২০০৮ সালের ২৯ জুন থেকে ৯ জুলাই পর্যন্ত প্রধান পরিকল্পনাবিদ বিদেশ ভ্রমণকালীন সময়ে ভারপ্রাপ্ত নগর পরিকল্পনাবিদের দায়িত্ব পালন। ২০০৫ সালের ২ এপ্রিল থেকে ২০০৭ সালের ২২ নভেম্বর পর্যন্ত সিডিএর ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান প্রকল্পে নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে কাজের দাবি এবং ২০০২ সালের ১০ জুলাই থেকে ২০০৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মেট্রো মেকার্স ডেভেলপার্স লিমিটেডে সহকারী নগর পরিকল্পনাবিদ হিসেবে কাজ।
তবে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল শুধু সরকারি/আধা সরকারি/স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে অভিজ্ঞতা গণ্য হবে। ফলে বেসরকারি অভিজ্ঞতা যোগ করে তিনি জালিয়াতির আশ্রয় নেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
উল্লেখ্য, নিয়োগপত্রের শর্তে’ বলা ছিল “আবেদনকারী সত্য গোপন করে প্রতারণামূলকভাবে কোনো তথ্য/সনদ দিলে তার নিয়োগ বাতিল হবে এবং আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” তবুও রহস্যজনকভাবে আবু ঈসা আনসারীর বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
এছাড়া তার বিরুদ্ধে ল্যান্ড ইউজ ক্লিয়ারেন্স (এলইউসি) ছাড়পত্র প্রদানে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। কিন্তু সিডিএ কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে এখনো কার্যকর তদন্তে এগোয়নি, যা সংশ্লিষ্ট মহলে তুলেছে নতুন এক প্রশ্ন।
অভিযোগ রয়েছে, তিনি ল্যান্ড ইউজ ক্লিয়ারেন্স (এলইউসি) অনুমোদন প্রদানের ক্ষেত্রেও ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িত। যদিও এ নিয়ে সিডিএ কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
এদিকে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে (সিডিএ) অবৈধ নিয়োগ ও চলতি দায়িত্ব বাতিলসহ পদমর্যাদা অনুযায়ী গ্রেডেশন লিস্ট প্রণয়নের দাবি জানিয়ে ২০০৯ সালে একটি আবেদন করেছিলেন তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক মো. মাহফুজুর রহমান। বর্তমানে তিনি “চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে” প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তিনি ৯ম গ্রেডের কর্মকর্তা হয়েও ২০০৮ সালে সিডিএ ৬ষ্ঠ গ্রেডের পদে কয়েকজনকে নিয়োগ দেয়, যার মধ্যে ছিলেন আবু ঈসা আনছারীও। সরকারি প্রজ্ঞাপনে শর্ত থাকা সত্ত্বেও মাত্র ৩০ বছর বয়সী বা কম অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের নিয়োগ দেওয়া হয়।
মাহফুজুর রহমানের অভিযোগ, বয়স ও চাকরির অভিজ্ঞতায় জুনিয়র হয়েও আবু ঈসা আনছারী উর্ধ্বতন পদে রয়েছেন, এতে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা মানহানির শিকার হচ্ছেন এবং বেতন স্কেল বৈষম্যের কারণে অনেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। একই সাথে নিয়ম ভঙ্গ করে নবসৃষ্ট পদে চলতি দায়িত্ব দেওয়ায় প্রতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভেঙে পড়ছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে সিডিএ-এর কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী কথা বললে তাদের তিনি বিভিন্নভাবে হয়রানি করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
মাহফুজুর রহমান ছাড়াও আবু ঈসা আনছারীর বিরুদ্ধে সংশ্লষ্ট মহলে বারংবার বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হলেও নির্বাক সিডিএ কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে জানতে ভারপ্রাপ্ত উপ-প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মো. আবু ঈসা আনছারীর মুঠোফোনে বারংবার চেষ্টা করেও সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
তবে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম সিটিজি পোস্টকে বলেন, এমন অভিযোগের কথা আমি শুনেছি- তবে নগর পরিকল্পনাবিদ ঈসা আনছারী বেশ পুরনো ও অভিজ্ঞ ব্যক্তি, চাইলেই 'অ্যাকশন' নেওয়া যায় না।
সিডিএ চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিম আরও বলেন, সিডিএ'র নতুন-পুরাতন সকল দুর্নীতির অনুসন্ধানে আমরা একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি- যাদের কাজ সিডিএর সব ধরণের দুর্নীতির অনুসন্ধান ও তা নির্মূল করা।
২৬ আগস্ট, ২০২৫
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আমদানি করা পূর্ণ কন্টেইনার (এফসিএল) পণ্য খালাসে আরোপিত চার গুণ ‘স্টোররেন্ট’ এক মাসের জন্য স্থগিত করেছে। বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার জট ও অপারেশনাল সমস্যা কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিবহন বিভাগের পরিচালক এনামুল করিম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।বিজ্...
২৬ আগস্ট, ২০২৫
২৬ আগস্ট, ২০২৫
২৬ আগস্ট, ২০২৫
২৬ আগস্ট, ২০২৫
২৫ আগস্ট, ২০২৫
২৬ আগস্ট, ২০২৫
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের আমদানি করা পূর্ণ কন্টেইনার (এফসিএল) পণ্য খালাসে আরোপিত চার গুণ ‘স্টোররেন্ট’ এক মাসের জন্য স্থগিত করেছে। বন্দরের ইয়ার্ডে কন্টেইনার জট ও অপারেশনাল সমস্যা কমাতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে চট্টগ্রাম ...