শুক্রবার (২২ আগস্ট) জুলাই জাতীয় সনদের পূর্ণাঙ্গ খসড়ায় মতামত দিয়েছে এনসিপি।

দলটি জামায়াতের মতোই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি চেয়েছে এবং বাস্তবায়নের জন্য গণপরিষদ গঠনের দাবি জানিয়েছে। একই সাথে সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না, খসড়া অঙ্গীকারনামার এই বিধানকেও সমর্থন করেছে দলটি। তবে সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য না দিয়ে ‘গাইডিং প্রিন্সিপাল’ হিসেবে স্বীকৃতির প্রস্তাব দিয়েছে এনসিপি।

চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন এখনও সনদে মতামত দেয়নি। দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য আলী আশরাফ আকন জানিয়েছেন, তারা পর্যবেক্ষণ কমিশনে জানিয়েছে এবং অন্য দলের সাথে আলোচনার পর মতামত দেবে।

খসড়া সনদে দুই দফা সংলাপে আলোচিত ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত জানিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। প্রথম দফায় আলোচিত ৬২টি সুপারিশে অধিকাংশ দলের ঐকমত্য হয়, দ্বিতীয় দফার ২২টির মধ্যে ১১টিতে একমত হয় দলগুলো। বাকি ৯টি প্রস্তাবে বিএনপির আপত্তি (নোট অব ডিসেন্ট) রয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে পিআর পদ্ধতিতে ১০০ আসনের উচ্চকক্ষ গঠন, সংবিধান সংশোধনে উচ্চকক্ষের সাধারণ সংখ্যাগরিষ্ঠতার বিধান এবং দুদক, কর্ম কমিশন, ন্যায়পাল, মহাহিসাবরক্ষক ও নিরীক্ষক নিয়োগে সাংবিধানিক কমিটি গঠনের প্রস্তাব। জামায়াত, এনসিপিসহ আরও দুটি দলের ভিন্নমত রয়েছে কয়েকটি সংস্কার প্রস্তাবে।

১৬ আগস্ট রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠানো খসড়া সনদের আট দফা অঙ্গীকারে বলা হয়েছে, আইন ও সংবিধানের ওপর প্রাধান্য থাকবে সনদের। সনদ নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না এবং বাস্তবায়নযোগ্য সংস্কারগুলো নির্বাচন পূর্বেই কার্যকর করতে হবে।

বিএনপি জানিয়েছে, সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ রহিত হলে নাগরিক অধিকার ক্ষুণ্ন হবে এবং সংবিধান সংশোধন নির্বাচনের পর সংসদে করতে হবে। বিপরীতে জামায়াতের অবস্থান উল্টো। দলটি জানিয়েছে, সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দিতে হবে, নির্বাচনের আগে ঐকমত্য হওয়া সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে এবং আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ না রাখার অঙ্গীকারকে তারা সমর্থন করেছে।

এনসিপিও সনদকে সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য দেওয়ার বিরোধিতা করেছে। যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, সংবিধান রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন। জুলাই সনদ রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল, তাই এটিকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। তবে সনদ হবে সংবিধানের ‘গাইডিং প্রিন্সিপাল’। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, সনদে যে প্রস্তাব রয়েছে—এক ব্যক্তি সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন, তা ভবিষ্যতের সংবিধান সংশোধনে বাধ্যতামূলক হবে।

তিনি আরও জানান, এনসিপি বাস্তবায়ন পদ্ধতি হিসেবে গণপরিষদ গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। যেসব সংস্কারে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো গণপরিষদ নির্বাচনের আগে বাস্তবায়ন করতে হবে। যেসব প্রস্তাবে আপত্তি রয়েছে, সেগুলো গণপরিষদে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত হবে। এর মাধ্যমে গণপরিষদ নির্বাচনের তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে নতুন সংবিধান প্রণয়ন হবে এবং পরে গণপরিষদই সংসদে রূপান্তরিত হতে পারে।

এনসিপি জানায়, আদালতে প্রশ্ন তোলার সুযোগ না রাখার অঙ্গীকারকে তারা সমর্থন করছে। জাবেদ রাসিন বলেন, “বিএনপি, জামায়াত বা কোনো অভ্যুত্থানবাদী শক্তি তো প্রশ্ন তুলছে না। তুলবে আওয়ামী লীগ। তাদের এই সুযোগ দেওয়া যাবে না।”

তবে নির্বাচন পূর্ব সংস্কার বাস্তবায়নের অঙ্গীকার স্পষ্ট নয় বলেও মন্তব্য করেছে এনসিপি। তাদের মতে, কোন কোন সংস্কার আগে বাস্তবায়নযোগ্য তা কমিশনকে নির্দিষ্ট করতে হবে।

একই দিন এনসিপি, সিপিবিসহ ৯টি দল মতামত দিয়েছে ঐকমত্য কমিশনে। বাংলাদেশ জাসদ জানিয়েছে, সনদকে সংবিধানের ওপর প্রাধান্য দেওয়া যাবে না। তারা সংবিধানের তপশিল থেকে ৭ মার্চের ভাষণ ও স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র বাদ দেওয়ার তীব্র বিরোধিতা করেছে।

সিটিজিপোস্ট/এমএইচডি