প্রচণ্ড রোদ উপেক্ষা করে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা এই মানবিক বহর যেন এক অনন্য উদাহরণ হয়ে উঠেছে মানবতার। অনেকের হাতে ছিল ব্যানার, মুখে ছিল আশাবাদী স্লোগান—"আমরা রক্ত দিতে এসেছি, জীবন বাঁচাতে এসেছি।"

তৃতীয় লিঙ্গের সদস্য ঝিনুক সিকদার বলেন, “আমরা ফেসবুকে দেখলাম, দগ্ধ শিশুদের বাঁচাতে প্রচুর রক্ত দরকার। সঙ্গে সঙ্গে আমরা ১০০ জন রওনা দিই, আরও ১০০ জন পথে আছেন। আমরা সবাই রক্ত দিতে এসেছি, বিনা স্বার্থে।”

জুমা নামের একজন জানান, “আমাদের গুরু মা পিংকি সিকদার বলেছেন, শিশুদের জন্য রক্ত দরকার। জিজ্ঞেস করলেন, কে কে যাবেন? আমরা একবাক্যে বলেছি—চলেন যাই! এটাই আমাদের দায়িত্ব।”

এই মানবিক উদ্যোগ শুধু রক্তদান নয়, বরং সামাজিক সহমর্মিতার এক অনন্য নিদর্শন হিসেবেই দেখা হচ্ছে। উপস্থিত সদস্যদের কেউ কেউ চোখে জল ধরে রাখতে পারেননি—তাঁদের ভাষায়, “একটা ছোট বাচ্চার জীবন যদি আমরা রক্ষা করতে পারি, সেটাই আমাদের বড় পাওয়া।”

হাবিবা নামের একজন বলেন, “যত রক্ত দরকার আমরা দিতে প্রস্তুত। শুধু চাই, ছোট ছোট এই নিষ্পাপ শিশুগুলো বাঁচুক। তাদের হাসি ফিরুক।”

পলাশ নামের আরও একজন বলেন, “জাতির দুঃসময়ে আমরা কখনও পিছিয়ে যাই না। যারা আমাদের পাশে থাকেন, আজ তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর সময় আমাদের।”

এ সময় ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ জানায়, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ শুধু বার্ন ইউনিট নয়, গোটা হাসপাতালেই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

চৈতি নামে একজন বলেন, “এই মানবিকতা আর সহানুভূতির দৃষ্টান্ত সমাজের সকল স্তরের মানুষকে নাড়া দেবে। সমাজে একদিন সব মানুষ একসূত্রে গাঁথা হবে—এটাই আমাদের কামনা।”

ঘটনাটি সামাজিক মাধ্যমে ইতোমধ্যেই ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। অনেকেই বলছেন, “মানবতার রঙ, পরিচয় বা শ্রেণি নেই—এই দৃশ্য সেটাই প্রমাণ করল।”