বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক পোস্টে নাহিদ ইসলাম এ দাবি করেন। তিনি পোস্টে তিনটি বিষয়ে বিস্তারিত উল্লেখ করেন।

নাহিদ ইসলাম লিখেছেন, “বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, জাতীয় সরকারের কোনো প্রস্তাবনা ছাত্রদের পক্ষ থেকে তাদের দেওয়া হয়নি, বরং অন্য মাধ্যমে এসেছে। এই বক্তব্যটি সত্য নয়।”

তিনি জানান, ৫ আগস্ট রাতে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর পরপরই তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিংয়ে জাতীয় সরকার ও নতুন সংবিধানের প্রস্তাব পেশ করা হয়। কিন্তু তারেক রহমান এতে রাজি হননি এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের দিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরামর্শ দেন। আলোচনায় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নামও প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রস্তাব করা হয়।

তিনি আরও জানান, উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেওয়ার আগে তারেক রহমানের সঙ্গে আরেক দফা মিটিংয়ে প্রস্তাবিত সদস্যদের নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা হয়।

শিবির নেতা সাদিক কায়েমের দাবিকে ভিত্তিহীন উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “সম্প্রতি একটি টকশোতে বলা হয়েছে, ছাত্রশক্তির গঠনপ্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল এবং তাদের নির্দেশনায় আমরা কাজ করতাম। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।” তিনি স্পষ্ট করে জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ বা সম্পর্ক থাকলেও রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় তাদের সম্পৃক্ততা ছিল না।

তিনি আরও দাবি করেন, সাদিক কায়েম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিলেন না, তবে ৫ আগস্ট থেকে তিনি এই পরিচয় ব্যবহার করে আসছেন। “এই অভ্যুত্থান শিবিরের একক উদ্যোগ নয়, শিবিরের নির্দেশনা বা দিকনির্দেশও ছিল না,” উল্লেখ করেন তিনি।

ফেসবুক পোস্টে সেনাবাহিনী প্রসঙ্গেও নাহিদ ইসলাম মন্তব্য করেন। ২রা অগাস্ট, ২০২৪ রাতে জুলকারনাইন সায়েররা একটা আর্মি ক্যু করে সামরিক বাহিনীর এক অংশের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল। এ উদ্দেশ্য কথিত সেইফ হাউজে থাকা ছাত্র সমন্বয়কদের চাপ প্রয়োগ করা হয়, থ্রেইট করা হয় যাতে সে রাতে ফেসবুকে তারা সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করে আর আমাদের সাথে যাতে আর কোনো যোগাযোগ না রাখে। রিফাতদের বিভিন্ন লেখায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে। আমাদের বক্তব্য ছিল একদফার ঘোষণা মাঠ থেকে জনগণের মধ্য থেকে দিতে হবে। আর যারা এভাবে চাপ প্রয়োগ করছে তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক। আমাদের ভিতর প্রথম থেকে এটা স্পষ্ট ছিল যে ক্ষমতা কোনোভাবে সেনাবাহিনী বা সেনাবাহিনী সমর্থিত কোনো গ্রুপের কাছে দেওয়া যাবে না। এতে আরেকটা এক-এগারো হবে এবং আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে

তিনি জানান, আন্দোলনকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান হিসেবে সফল করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। “৫ আগস্ট থেকে আমরা এ অবস্থান ব্যক্ত করে আসছি,” যোগ করেন তিনি।

“পাল্টা নেতৃত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টা হচ্ছে,” উল্লেখ করে নাহিদ ইসলাম বলেন, “কল রেকর্ড ফাঁস, নজরদারি, চরিত্রহনন, অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা—এমন কোনো কৌশল বাদ দেওয়া হচ্ছে না। বাংলাদেশে সিটিং মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচার হচ্ছে, এরকম এর আগে কখনো ঘটেছে কি না জানা নেই। তবে মিথ্যার উপর দিয়ে বেশিদিন টেকা যায় না, তারাও টিকবে না।”

সিটিজি পোস্ট/ এসএইচএস