রাস্তার মোড়ে শোভা বাড়ালেও প্রয়োজনে অচল ভূমিকায় ফায়ার হাইড্রেন্ট
নিজস্ব প্রতিবেদক | সিটিজি পোস্ট
প্রকাশিত হয়েছে: ১৯ অক্টোবর, ২০২৫
_(44).jpg&w=3840&q=75)
চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আগুন লাগা যেন এখন নিত্য দিনের ঘটনা। আগুন লাগার ঘটনা শোনা মাত্রই মুহূর্তেই ছুটে যেতে দেখা যায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যের। তবে প্রতিবারই আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস সদস্যের পড়তে হয় তীব্র পানি সংকটে। নগরীতে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় আগুন নেভাতে প্রচণ্ড বেগ পেতে হয় তাদের। যা দুর্ঘটনার মাত্রা বাড়িয়ে দেয় বহুগুণে।
অগ্নিনির্বাপণের এ দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানে চট্টগ্রাম ওয়াসা ২০১৬ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে প্রায় ৪ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ১৭৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করে। উদ্দেশ্য ছিল বড় অগ্নিকাণ্ডের সময় দ্রুত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা। কিন্তু বাস্তবে প্রকল্পটি এখন সম্পূর্ণ অকার্যকর হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম শহরে গেল চার দশকে প্রায় ২৪ হাজার পুকুর, দীঘি, জলাশয় ও জলাধার বিলুপ্ত হয়েছে। একসময় আগুন নেভাতে পানির উৎস ছিল এসব জলাধার। এখন শহর এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে পানির উৎস নিয়ে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের। ফলে আগুনে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরো কয়েকগুণে বেড়ে যায়।
চট্টগ্রাম ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ওয়াসার দুটি পানি সরবরাহ প্রকল্পের আওতায় এসব ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়েছিল। মূলত এ দুটি প্রকল্পে বিনিয়োগকারী দাতা সংস্থার শর্ত পূরণ করতেই ফায়ার হাইড্রেন্টগুলো স্থাপন করা হয়। এর মধ্যে ২০১৯ সালের শুরুতে ‘চিটাগাং ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রজেক্ট’এর আওতায় ২৯টি হাইড্রেন্ট বসানো হয়। পরে ২০২২ ও ২০২৩ সালে ‘কর্ণফুলী ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্ট’ ফেজ-২ এর আওতায় আরো ১৪৪টি ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করা হয়।
তবে নগরীর মোড়ে মোড়ে স্থাপিত এসব ফায়ার হাইড্রেন্ট এখন পড়ে আছে নিষ্ক্রিয় অবস্থায়।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলছেন, হাইড্রেন্টগুলো ব্যবহারযোগ্য নয়- এতে পানির পর্যাপ্ত চাপ নেই, সংযোগেও সমস্যা আছে, এমনকি জরুরি সময়ে এগুলো থেকে পানি তোলা যায় না।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, একটি ফায়ার হাইড্রেন্ট চালাতে কমপক্ষে ৪ থেকে ৭ বার (পানির চাপ মাপার পরিমাপক) পানির চাপ দরকার, যাতে ৪০ থেকে ৭০ মিটার পর্যন্ত পানি তোলা যায়। কিন্তু চট্টগ্রাম ওয়াসার স্থাপন করা হাইড্রেন্টগুলোর চাপ মাত্র এক ‘বার’, যা দিয়ে সর্বোচ্চ ১০ মিটার পর্যন্ত পানি ওঠানো সম্ভব। ফলে এতো কম চাপের পানি দিয়ে বড় কোনো আগুন নেভানো সম্ভব নয়।
অন্যদিকে এসব হাইড্রেন্টের পাইপ সংযোগ নিতে ফায়ার সার্ভিসের আলাদা অ্যাডাপ্টর প্রয়োজন হয়, যা ওয়াসার স্থাপিত এই সকল হাইড্রেন্টে নেই। ফলে জরুরি অবস্থায় সংযোগ নিতে গিয়ে সময়ের বেশ অপচয় হয়, যা আগুন নেভানোর কাজে বড় বাধা তৈরি করে।
ফায়ার সার্ভিস সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, প্রকল্প বাস্তবায়নের পর থেকে ওয়াসা কোনো রক্ষণাবেক্ষণ বা কার্যকারিতা যাচাই করেনি। বছরের পর বছর পড়ে থেকে হাইড্রেন্টগুলো এখন মরিচা ধরা অচল যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তা বলেন, “আমরা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি হাইড্রেন্ট আছে, কিন্তু পানি ওঠে না। এতে আগুন নিয়ন্ত্রণে সময় লাগে অনেক বেশি।”
সংশ্লিষ্টদের দাবি, ওয়াসা ও ফায়ার সার্ভিসের মধ্যে সমন্বয়ের অভাবই প্রকল্পটিকে ব্যর্থ করেছে। আগুন নেভাতে প্রয়োজনীয় কারিগরি মানদণ্ড বিবেচনা না করেই বাস্তবায়ন করা হয়েছে প্রকল্পটি।
ফলে ৪ কোটি টাকার ব্যয়ে স্থাপন করা ১৭৪টি হাইড্রেন্ট রাস্তার মোড়ে মােড়ে শোভা বৃদ্ধির কাজ করলেও অগ্নিকাণ্ডের সময় তা পড়ে থাকে অচল অবস্থায়।
এ নিয়ে সচেতন মহলের প্রশ্ন- এত অর্থ ব্যয় করে এমন অকেজো প্রকল্পের দায় কার ঘাড়ে পড়বে?
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাদের মতে, যদি দ্রুত পানির চাপ বৃদ্ধি ও সংযোগ ব্যবস্থার সংস্কার না করা হয়, তবে ভবিষ্যতের বড় অগ্নিকাণ্ডেও একই সংকটে পড়তে হবে।
তাদের দাবি, সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনার ত্রুটি ও কারিগরি দুর্বলতায় নগরীর অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থায় ফায়ার হাইড্রেন্টগুলো এখন কাগুজে প্রকল্পে পরিণত হয়েছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-পরিচালক মো. জসিম উদ্দীন জানান, কোন প্রকার পরামর্শ ছাড়াই চট্টগ্রাম ওয়াসা এই ফায়ার হাইড্রেন্টগুলো স্থাপন করেছে। ফায়ার হাইড্রেন্টের জন্য আলাদা লাইন দরকার, তবে এগুলো বসানো হয়েছে রেগুলার সার্ভিস লাইনের উপর। তাই পানির পর্যাপ্ত চাপ পাওয়া যায় না।
তিনি আরও জানান, পর্যাপ্ত চাপ না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও এই সকল ফায়ার হাইড্রেন্ট ব্যবহার করতে পারছেন না ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।
সিটিজি পোস্ট/এইচএস

.jpg&w=3840&q=75)

.png&w=3840&q=75)
.png&w=3840&q=75)