চট্টগ্রাম নগরীর সল্টগোলা রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাষ্ট শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি দেড় যুগ ধরে লুটপাট, টাকার কারসাজি আর দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সভাপতি এবিএম সৈয়দ আহম্মদ, সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হক ও অর্থ সম্পাদক রহিমকে ঘিরে উঠেছে কোটি টাকার অর্থ কেলেঙ্কারির অভিযোগ।
দোকান মালিকদের অভিযোগ, উন্নয়ন, ভ্যাট ও নিরাপত্তার নামে কোটি কোটি টাকা তোলা হলেও সেই টাকার কোনো হিসাব নেই। সমিতির অর্থ সুরক্ষার পরিবর্তে পরিচালনা কমিটি সেটিকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করছে। তাদের মতে, সমবায় সমিতি এখন “দুর্নীতিবাজ সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি।”
একক রাজত্ব, নির্বাচন নেই দেড় যুগ
গেল ১৫ বছর ধরে নির্বাচন এড়িয়ে কেবল ‘সিলেকশন’ প্রক্রিয়ায় গঠিত হচ্ছে পরিচালনা কমিটি। একই ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে নেতৃত্ব আঁকড়ে ধরে সমিতিকে নিজেদের আখড়ায় পরিণত করেছে।
দোকান মালিকরা বলছেন, নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করেই একক রাজত্ব কায়েম করে চলছে তাদের লুটপাট।
চাঁদাবাজির অভিযোগ
আদালতে চলমান মামলার অজুহাতে দোকান মালিকদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি চলছে নিয়মিত। তিন দফায় ১৪১ জন দোকান মালিকের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা করে তোলা হলেও তার কোনো হিসাব নেই। বরং কমিটির সদস্যরা মামলা চালানোর নামে ২১ লাখ ১৫ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে নিজেদের পকেট ভারী করেছেন বলে দাবি সাধারণ দোকান মালিকদের ।
টাকার হদিস নেই
মার্কেট উন্নয়ন, মসজিদের ফান্ড, দোকান এক্সটেনশন, বিদ্যুৎ বিলে অতিরিক্ত ভ্যাট ও নিরাপত্তার নামে কোটি কোটি টাকা খরচ দেখানো হলেও নেই কোনো সঠিক হিসাব। সমবায়ের টাকা ব্যাংকে রাখার নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। বরং ব্যক্তিগত ফান্ডে রেখে অর্থ আত্মসাৎ করেছে কমিটির নেতারা।
চলতি বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি সাধারণ সম্পাদক এনামুল হকের স্বাক্ষরিত নোটিশে মার্কেট, মেস ঘর ও টয়লেটের আয়-ব্যয়ের যে হিসাব দেখানো হয়, দোকান মালিকদের দাবি সেটি সম্পূর্ণ অযৌক্তিক।
সেখানে সমিতির বর্তমান উদ্বৃত্ত দেখানো হয়েছে মাত্র ৬ লাখ ৩৭ হাজার ১০৯ টাকা। এর মধ্যে ৬ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যাংকে জমা থাকলেও বাকি ১৮ হাজার ১০৯ টাকার হদিস নেই।
মেস ঘরের হিসাবেও একই কারসাজি। বছরে মোট আয় দেখানো হয়েছে ৫ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ টাকা। কিন্তু ব্যাংকে জমা আছে মাত্র ১ লাখ ৩৬ হাজার ১৫০ টাকা। দোকান মালিকদের দাবি, বাকি টাকা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নাজেদের কাছে রেখে আত্মসাতের চেষ্টা করছে।
টয়লেট বাবদ ১০ লাখ টাকা আয় দেখিয়ে তার মধ্যে ৮ লাখ টাকাই ব্যয় দেখানো হয়েছে। অথচ সেই ব্যয়ের কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি পরিচালনা কমিটি।
অভিযোগ রয়েছে, বাকি ১ লাখ ৫৮ হাজার ৭২৮ টাকাও সাধারণ সম্পাদক নিজের কাছে রেখে দিয়েছেন।
দোকান মালিকদের ক্ষোভ
দোকান মালিক কামাল উদ্দিন বাবুল বলেন, “বিগত ১৫ বছর ধরে তারা সমিতির টাকা লুট করেছে। হিসাব চাইতে গেলেই হয়রানি করে।”
অন্য এক দোকান মালিক মো. সুমন ওরফে কালু বলেন, “পুরো কমিটিই দুর্নীতিতে জর্জরিত। উন্নয়নের নামে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েও কোনো উন্নয়ন হয়নি।”
আরেক জন দোকান মালিক র্মিজা আপেল বলেন, “অযোগ্য লোকেরা সমিতির চেয়ারে বসে সব অনিয়ম চালাচ্ছে।”
জাহাঙ্গীর আলম মজুমদার নামের অপর এক দোকান মালিক বলেন, সমিতিতে দুর্নীতির শেষ নেই, নেই টাকা-পয়সার কোন হিসেব। মার্কেট উন্নয়ন, টয়লেট, দারোয়ান থেকে শুরু মসজিদ- কিছুই বাদ দেয়নি তারা। এতো এতো দুর্নীতির পরও তাদের টাকার ক্ষিদে মাটছে নাহ।
প্রশাসনের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ
দোকান মালিকরা বলছেন, দুর্নীতির এত অভিযোগের পরও প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই। সমবায়ের টাকা গায়েব, দোকান মালিকদের হয়রানি, জালিয়াতি- সবকিছুর পরও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যেন নীরব দর্শক।
কর্তৃপক্ষের এই নীরবতা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন দোকান মালিকরা। তাদের মতে, প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা দুর্নীতিবাজ কমিটিকে আরো শক্তিশালী করেছে।
দোকান মালিকরা বলছেন, “প্রশাসন যদি শুরুতেই ব্যবস্থা নিত, তাহলে আজ সমিতি এভাবে ধ্বংস হতো না।”
যোগাযোগের চেষ্টা ব্যর্থ
পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অর্থ সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করতে সমিতি অফিসে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে সরেজমিনে অফিসে গিয়ে দেখা যায়, একজন পাহারাদার চালাচ্ছেন অফিসিয়াল সব কার্যক্রম।
তবে মুঠোফোনে পরিচালনা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও অর্থ সম্পাদকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউই ব্যস্ততার অযুহাতে এ ব্যাপারে কোন বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
এদিকে পরিচালনা কমিটির অর্থ সম্পাদক রহিম সিটিজি পোস্টকে বলেন, এখন কথা বলা সম্ভব না, আমাদের সভাপতি আপনার সাথে রবিবারে বসবে বলেছে, আপনি রবিবার আসেন।
এদিকে রবিবার আবারও সরেজমিনে পরিচালনা কমিটির অফসে গেলে সেখানে সভাপতি এবিএম সৈয়দ আহম্মদ'র উপস্থিতি না থাকলেও দেখা হয় সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হক ও অর্থ সম্পাদক রহিমক সহ কমিটির আরো বেশ কয়েকজন সদস্যদের সাথে।
এ সময় অভিযোগ ও ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশ্নের জবাবে তারা ২০১৩ থেকে ২৪ পর্যন্ত বিগত ১০ বছরে হিসাব দেখিয়ে সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, কিছু মহল আমাদের পেছনে এসব মিথ্যা ও অপতথ্য ছড়াচ্ছে।
এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হক বলেন, আমরা সকলের উপস্থিতিতে ইলেকশন করে নির্বাচিত হয়েছি আমাদের সমিতিতে কোন প্রকার জালিয়াতি বা দুর্নীতি নেই। আর আমাদের সকল হিসেবের তথ্য সংগ্রহ করা আছে।
মার্কেটের অন্য একটি আয়ের উৎস মেচঘর ও টয়লেটের আয়-ব্যায়ের হিসেব নিয়েও উঠেছে গড়মিলের অভিযোগ- সেখানে চেয়ে ব্যয় বেশি দেখানো হয়েছে। বলা হয়েছে দায়িত্বে থাকা রূপবান বেগম টাকা পরিষদ না করে ছেড়ে দিতে চাইলে তার থেকে টাকা পরিষধের জন্য অঙ্গীকারনামা নেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হক ও অর্থ সম্পাদক রহিম বলেন, অনুসারে রূপবান বেগম আমাদের প্রতি মাসে ৫০০০ টাকা করে পরিশোধ করবে বলেছে।
এদিকে সমিতির দেওয়া তথ্যকে ভুল দাবি করে রূপবান বেগম বলেন, সমিতির লোকজন বিভিন্ন ভাবে চাপ সৃষ্টি করে আমার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়েছে। আমি দায়িত্ব ছাড়ার আগেই সব টাকা পরিষদ করেছিলাম কিন্তু তারা তাদের হিসাব খাতায় দেখিয়েছে আমার কাছে টাকা পায়!
রূপবান বেগম জানান, আমি টাকা পরিষদ করলেও সাধারণ সম্পাদক মো. এনামুল হক কখনো কোনো হিসেব রাখতেন না।
রূপবান বেগম অভিযোগের সুরে আরো বলেন, আমি দায়িত্বে থাকাকালীন এনামুল হকের বাড়িতে ভাড়ায় থাকতাম, তিনি প্রতিমাসে নিজ ইচ্ছামত বিদ্যুৎ বিল আমার থেকে আদায় করতেন।
তিনি আরও বলেন, ম্যাচ ঘরে লাভ না হওয়ায় আমি সেই দায়িত্ব ছেড়ে দেই কিন্তু টয়লেটের বিষয়ে আমাকে এক প্রকার চাপ সৃষ্টি করে ছেড়ে দেয়ার জন্য। টয়লেটের দায়িত্ব নেওয়ার সময় আমি এক লক্ষ টাকা এডভান্স করেছি, তারা সে টাকা কিভাবে কেটেছে তার কোন হিসাব নাই- জানতে চাইলেও তারা কিছু বলেন না।
রূপবান বেগম জানান, আমার শাশুড়ি যখন টয়লেটের দায়িত্বে ছিল তিনিও এক লক্ষ টাকা দেন সেটিও তারা ভুলভাল বুঝিয়ে খেয়ে ফেলেছে।
দোকান মালিকদের দাবি
“সমিতিকে বাঁচাতে হলে দুর্নীতিবাজ পরিচালনা কমিটিকে সরাতেই হবে”- এমন দাবি এখন প্রকাশ্যে তুলছেন দোকান মালিকরা। তাদের মতে, সল্টগোলা রেলওয়ে কর্মচারী কল্যাণ ট্রাষ্ট শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক বহুমুখী সমবায় সমিতি আসলেই দুর্নীতির আখড়া ছাড়া আর কিছু নয়।
সিটিজিপোস্ট/এমসি/এইচএস
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
আসন্ন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে অতীতের ফ্যাসিবাদী ‘পরিবারতন্ত্র’ পুনর্বহালের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম সচেতন ব্যবসায়ী সমাজের আহ্বায়ক এসএম নুরুল হক।বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি অভিযোগ করে বলেন, সাবেক এমপি এম এ লতিফের পরিবারের সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের ভুয়...
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
আসন্ন চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনে অতীতের ফ্যাসিবাদী ‘পরিবারতন্ত্র’ পুনর্বহালের চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম সচেতন ব্যবসায়ী সমাজের আহ্বায়ক এসএম নুরুল হক।বুধবার সকালে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক ...