বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকত কক্সবাজারে প্রতিদিন লাখো পর্যটক নামেন সাগরে। আগামী ১ অক্টোবর থেকে সৈকতে চালু থাকা একমাত্র লাইফগার্ড সেবাটিও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বহুগুণে বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন পর্যটক, স্থানীয় সংগঠন ও বিশেষজ্ঞরা।
২০১২ সালে আন্তর্জাতিক মানবিক সংস্থা রয়্যাল ন্যাশনাল লাইফবোট ইনস্টিটিউট (আরএনএলআই)-এর অর্থায়নে লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে চালু হয় সি-সেফ লাইফগার্ড সেবা। গত ১২ বছরে তারা ৮১৫ জন পর্যটককে উদ্ধার করেছেন, আর সাগরে ভেসে যাওয়া ৬৫টি মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছেন। বর্তমানে তাদের ২৭ জন লাইফগার্ডসহ মোট কর্মী আছেন ৩৫ জন।
কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন অর্থ জোগাড় করতে না পারায় ৩০ সেপ্টেম্বরের পর সেবাটি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। অথচ চলতি বছরেই সৈকতে গোসলে নেমে স্রোতে ভেসে মারা গেছেন অন্তত ১৪ জন। সংশ্লিষ্টদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটাই সবচেয়ে বেশি মৃত্যু।
সৈকতের লাবণী পয়েন্ট থেকে কলাতলী পর্যন্ত মাত্র পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় লাইফগার্ড থাকলেও বাকি ১১৫ কিলোমিটারে নেই কোনো উদ্ধার ব্যবস্থা। অথচ হিমছড়ি, ইনানি বা টেকনাফের মতো জনপ্রিয় জায়গাগুলোতেও প্রতিদিন হাজারো মানুষ সমুদ্রে নামেন। দুর্ঘটনা ঘটলেও সাহায্য করার কেউ থাকেন না।
সি-সেফ সুপারভাইজার মোহাম্মদ ওসমান বলেন, “প্রতিদিন সাগরে ঘুরে বেড়িয়ে আমরা পর্যটকদের জীবন বাঁচিয়েছি। এই সেবা না থাকলে মৃত্যু বাড়বেই।”
জেলা প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি সৈকতে চেয়ার-ছাতা, দোকান, বিচ বাইক, লকারসহ নানা খাত থেকে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব তোলে। পর্যটন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই অর্থ থেকেই লাইফগার্ড সেবা চালানো সম্ভব।
তবে হোটেল মালিক সমিতি জানিয়েছে, মাসে ১৪-১৫ লাখ টাকা ব্যয় বহন তাদের পক্ষে কঠিন। এ কারণে হোটেল–রিসোর্টের মাধ্যমে সেবা চালুর সরকারি প্রস্তাবও কার্যকর হয়নি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কক্সবাজারে প্রতিবছর ৫০ লাখেরও বেশি দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে পর্যটনশিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কক্সবাজার সার্ফ গার্লস অ্যান্ড বয়েজ ক্লাবের সভাপতি রাশেদ আলম বলেন, “এমন গুরুত্বপূর্ণ সেবা শুধুই এনজিওর ওপর নির্ভর করে চালানো সম্ভব নয়। সরকারের দীর্ঘমেয়াদি বাজেট ও প্রশাসনিক সহায়তা ছাড়া এটি টেকসই হবে না।”
সিলেট থেকে ঘুরতে আসা পর্যটক আমিনুল হক বলেন, “লাইফগার্ড সেবা চালু রাখতে সরকারকে এখনই স্থায়ী উদ্যোগ নিতে হবে। সমুদ্রসৈকতে লাইফগার্ড সেবা বন্ধ হবে সেটা ভাবায় যায় না।"
সিটিজিপোস্ট/জাউ