চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) সাবেক কাউন্সিলর ও কুখ্যাত ‘পাহাড়খেকো’ জহুরুল আলম জসিম ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে লুকিয়ে ছিলেন। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। শুক্রবার (৭ মার্চ) নগর পুলিশের উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার আমিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ জানায়, বুধবার (৫ মার্চ) রাতে সিএমপি ও পাঁচলাইশ থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে বসুন্ধরার একটি ফ্ল্যাট থেকে জসিমকে আটক করা হয়। জসিম চসিকের ৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক।
বিভিন্ন সংবাদপত্র শিরোনাম করেছে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার তার ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রীকে ছাড়াতেই তিনি নিজেই ধরা দিয়েছেন—এমন প্রশ্নে আমিরুল বলেন, ‘এটা হাস্যকর স্টেটমেন্ট। আমি নিজে সেখানে ছিলাম। তিনি আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পালাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার আগেই আমরা তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হই।’
উপ-পুলিশ কমিশনার আমিরুল আরো বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই নগরের ষোলশহর ও মুরাদপুর এলাকায় জসিমের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগ ছাত্র-জনতার ওপর হামলা চালায় এবং আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলিবর্ষণ করে। এ ঘটনায় সেদিন ছাত্রদলকর্মী ওয়াসিম আকরাম, শিবিরকর্মী ফয়সাল আহমেদ শান্ত ও ফার্নিচার ব্যবসায়ী মো. ফারুক গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। হামলায় ৪০ থেকে ৫০ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।’
জসিমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে পাহাড় কাটা, সরকারি জমি দখল, চাঁদাবাজি এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগ রয়েছে। গত বছরের ১৬ জুলাই ষোলশহর ও মুরাদপুর এলাকায় তার নেতৃত্বে ছাত্রদল ও শিবির কর্মীদের ওপর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় তিনজন নিহত এবং ৪০ থেকে ৫০ জন আহত হয়।
পুলিশ জানায়, জসিমের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামে মোট ১৮টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে হত্যা মামলা ২টি, পরিবেশ আইনে ৩টি, চাঁদাবাজির ২টি, বিস্ফোরক আইনে ২টি এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার অভিযোগে ২টি মামলা রয়েছে।
২০২৩ সালের ২৬ জানুয়ারি পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল পাহাড় কাটা ও ছড়াখাল দখল পরিদর্শনকালে জসিম ও তার সহযোগীদের হামলার শিকার হয়। এ ঘটনায় পরিবেশকর্মী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানসহ আটজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।
জসিমের স্ত্রী তাসলিমা বেগমকেও গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি বর্তমানে কারাগারে আছেন।
জসিমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় ২০২৪ সালের ২৫ জানুয়ারি তাকে কাউন্সিলর পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। তবে মাসখানেকের মধ্যেই তিনি আবার পদ ফিরে পান।