চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় একটি সামাজিক সালিশি বৈঠককে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, যাতে একজন নারীসহ অন্তত ৮ জন আহত হয়েছেন।
রবিবার (৮ জুন) দুপুরে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের পাহাড়কুল নয়াপাড়া এলাকায় এ রক্তক্ষয়ী ঘটনার সূত্রপাত হয়।
ঈদের আগের দিন বসতঘরের টিনে ঢিল ছোড়াকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তিকে মারধর ও ছুরিকাঘাত করে প্রতিপক্ষ। ভুক্তভোগী রবিউল আওয়াল বিষয়টি স্থানীয় সমাজপতি মো. ইদ্রিস মিয়াকে জানান এবং থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
সমস্যার সমাধানে সমাজপতি ইদ্রিস মিয়া সালিশি বৈঠকের আয়োজন করেন। কিন্তু বৈঠক চলাকালে প্রতিপক্ষের লোকজন অস্ত্রসহ উপস্থিত হয়ে হামলা চালায়।
ঘটনার বর্ণনায় ইদ্রিস মিয়া বলেন,
“আমি বৈঠকে উপস্থিত হতেই প্রায় দেড় শতাধিক যুবক দেশীয় অস্ত্র ও শর্টগান নিয়ে হামলা চালায়। একজন আমার মাথায় আঘাত করে, আমি মাটিতে পড়ে যাই।”
তিনি আরও জানান, তার স্ত্রী ও পুত্রবধূর গায়ে হাত তুলে স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নেয়া হয়, এবং সালিশে আসা লোকজনের মোবাইল ও মানিব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
স্থানীয়দের দাবি, অন্তত চার রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছে, যাতে এলাকা আতঙ্কে ভরে ওঠে।
আহত ৮ জনের মধ্যে রয়েছেন মো. ইদ্রিস মিয়া (৬৫),মুরাদ হোসেন (২৭),মো. শেফায়েত (২৭),মো. জুনায়েদ (২৫),মো. ছাবের হোসেন (২৮),মো. শফিক (২০),মাহমুদুল হক (৫০), জোবেদা খাতুন (৪৫) ।
তারা সাতকানিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
হামলাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে অন্তত ১০ জনকে, তাদের মধ্যে রয়েছেন মো. আয়াত (১৮),রেজাউল করিম (২০),মো. মহিউদ্দিন (২৫),মনির হোসেন (২২),জামাল হোসেন (৪৫),বেলাল হোসেন (২২),সৈয়দ আমিন (৪০),আনোয়ার হোসেন (২৮),হেলাল উদ্দিন (২০), মো. আরাফাত (১৮) ।
হামলার পরপরই অভিযুক্তরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. তফিকুল আলম, থানা পুলিশ ও সেনা সদস্যরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এএসপি বলেন,
“সংঘর্ষের সময় গুলিবর্ষণের তথ্য স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। পুরো ঘটনা তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
এই হামলা শুধু একটি সালিশি বৈঠকের বিঘ্ন নয়, বরং সামাজিক শালিস প্রথার নিরাপত্তা ও বিশ্বাসযোগ্যতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল বলছেন, “এভাবে সমাজপতিকে গুলি ও অস্ত্রের মুখে ফেলে হামলা চালানো হলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রশাসনের কার্যকারিতা প্রশ্নের মুখে পড়ে।”