চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় দুই জামায়াতকর্মী নেজাম উদ্দিন ও ছালেককে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য উঠে এসেছে।
পুলিশ জানায়, নিহত নেজাম ও ছালেকের কাছে পাওয়া অস্ত্রটি গত ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম কোতোয়ালী থানা থেকে লুট হওয়া সরকারি অস্ত্র। এছাড়া, গত তিন মাসে তারা ওই এলাকায় অন্তত ৮ বার গিয়েছিলেন। স্থানীয় ইউপি সদস্যের স্ত্রীকে চাঁদার জন্য চড়-থাপ্পড় মারার অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। এ কারণে এলাকাবাসীর মধ্যে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ তৈরি হয়।
জামায়াত ইসলামী দাবি করেছে, এওচিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম প্রকাশ মানিকের লোকজন বিচারের কথা বলে ডেকে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যা করেছে। তবে পুলিশ জানায়, তদন্তে মানিক চেয়ারম্যান বা বিশেষ দলের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, “নেজাম ও ছালেকের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। তাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে, তারা চাঁদা আদায়ের জন্য ওই এলাকায় নিয়মিত যেতেন। ঘটনার দিন তারা ৭টি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে এলাকায় গিয়েছিলেন এবং অস্ত্র প্রদর্শন করেছিলেন। স্থানীয়দের ক্ষোভের কারণেই তারা গণপিটুনির শিকার হন।”
তিনি আরও বলেন, “নেজামের কাছে পাওয়া অস্ত্রটি কোতোয়ালী থানা থেকে লুট হওয়া সরকারি অস্ত্র। এটি কীভাবে তাদের হাতে গেল, তা তদন্ত করা হচ্ছে।”
এদিকে, সাতকানিয়া উপজেলা জামায়াতের প্রচার সেক্রেটারি আইয়ুব আলী পুলিশের বক্তব্যকে ভিত্তিহীন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “নেজাম ও ছালেককে বিচারের কথা বলে ডেকে নিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই সত্য বেরিয়ে আসবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩ মার্চ রাত ৯টার পর নেজাম ও ছালেকসহ ১০-১২ জন সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে ছনখোলা এলাকায় একটি দোকানের সামনে নামেন। তারা অস্ত্র প্রদর্শন করলে স্থানীয়রা সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের ঘিরে ফেলে। এ সময় নেজামের সহযোগীরা জনতার দিকে গুলি ছোড়ে। শতাধিক গুলি ছোড়ার পর নেজামের সহযোগীরা পালিয়ে গেলেও নেজাম ও ছালেক গণপিটুনিতে নিহত হন।
ঘটনার তিন দিন পরও নিহত জামায়াতকর্মীদের পরিবার বা স্থানীয়দের পক্ষ থেকে কোনো মামলা করা হয়নি। তবে পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় অস্ত্র আইনে পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে।
পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম সানতু বলেন, “এ ঘটনায় দুটি গ্রুপ জড়িত। একদল গ্রামবাসী, যারা গুলিবিদ্ধ হয়েছে, অন্যদল নিহত জামায়াতকর্মী। যেহেতু পুলিশের লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে, তাই আমরা অস্ত্র আইনে মামলা করেছি।”