ছাত্রদের নেতৃত্বে দেশে নতুন রাজনৈতিক দলের যাত্রা শুরু হলো ২৮ ফেব্রুয়ারি। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামের এই দল চলবে নাহিদ ইসলাম ও আখতার হোসেনের নেতৃত্বে। যারা শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনের সম্মুখ সারির নেতা। এই দলের ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে ইতোমধ্যে।
এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সূতিকাগার চট্টগ্রামে এই দলের কমিটির জন্য চলছে ক্ষণগণনা। চট্টগ্রামে দলটির নেতৃত্বে কারা আসতে পারেন তা নিয়ে আছে নানা গুঞ্জন। কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পাওয়া ব্যক্তিরা স্পষ্ট করে এই ইউনিটের নেতৃত্বের ব্যাপারে কিছুই বলছেন না। তারা বলছেন, এখনো মাত্র কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন হয়েছে। কারা মহানগর ও জেলার নেতৃত্বে আসতে পারেন সে বিষয়ে এখনই বলা যাচ্ছে না। তবে যারা এতোদিন নাগরিক কমিটিতে বিভিন্ন থানায় কাজ করেছেন তারাই আসতে পারেন মহানগর ও জেলার কমিটিগুলোতে। এক্ষেত্রে যার যার ভূমিকা নির্ভর করবে দলে কে কোন পদে থাকবেন।
কেন্দ্রীয় কমিটির দায়িত্ব পাওয়া একাধিক নেতা জানান,ছাত্রদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) চট্টগ্রামের অনেকেই স্থান পেয়েছেন। তারাই নির্ধারণ করবেন কারা চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলার কমিটিতে থাকবেন। চট্টগ্রাম থেকে যারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পেয়েছেন তারা হলেন, চন্দনাইশের মুহম্মদ হাসান আলী (যুগ্ম আহ্বায়ক), সাগুফতা বুশরা মিশমা (যুগ্ম সদস্য সচিব), এস এম সুজা উদ্দিন (যুগ্ম সদস্য সচিব), মীর আরশাদুল হক, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) জুবায়েরুল আরিফ), সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) ইমন সৈয়দ, সদস্য নীলা আফরোজ, জাওয়াদুল করিম।
এর মধ্যে চট্টগ্রামের যারা যুগ্ম আহ্বায়ক ও যুগ্ম সদস্য সচিব আছেন তারাই জোর ভূমিকা রাখতে পারে এই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের নেতৃত্ব বাছাইয়ে। এছাড়া এই ইউনিটের নেতা বাছাইয়ে কেন্দ্রীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহও ভূমিকা রাখবেন। তিনি এই দলের উত্তরাঞ্চলের দায়িত্বে রয়েছেন। আর সালেহ উদ্দিন সিফাত হয়েছেন দপ্তর সম্পাদক। তিনিও এই অঞ্চলের নেতৃত্ব নির্ধারণে ভূমিকা রাখতে পারেন বলে জানা গেছে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় জাতীয় নাগরিক কমিটির কোনো কমিটি নেই। বেশিরভাগই আছে থানা কমিটি। এতোদিন থানা কমিটির অধীনে কাজ করে যাচ্ছিলেন নাগরিক কমিটির নেতারা। এর আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর, দক্ষিণ জেলার ৭৫৪ সদস্য বিশিষ্ট ৩ কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে ২৬ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত নতুন ছাত্র সংগঠনে চট্টগ্রাম থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের খান তালাত মাহমুদ রাফি, মাহফুজুর রহমান যুগ্ম আহ্বায়ক হয়েছেন। এছাড়াও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আল মাসনুন সিনিয়র যুগ্ম সদস্য সচিব হয়েছেন।
জানতে চাইলে জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাওয়াদুল করিম বলেন, নতুন রাজনৈতিক দলে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় কারা নেতৃত্বে আসছে সেটি এখনো নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না। তবে এটি বলতে পারি নাগরিক কমিটিতে যারা আছেন তারাই আগামীতে দলটির নেতৃত্বে দিবেন।
তিনি আরও বলেন, খুব দ্রুত আমরা এই কাজে হাত দেব। দুয়েক দিনের মধ্যে আমরা চট্টগ্রাম নিয়ে একটি মিটিং করবো। নাগরিক কমিটিতে যারা সম্মুখ সারিতে আছেন তাদের কাজ, ভূমিকা ও যোগ্যতা সবকিছুকে বিবেচনা করে নেতৃত্বে আনা হবে। বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরে জাতীয় নাগরিক কমিটির কোনো কমিটি নেই। তবে প্রত্যেক থানায় কমিটি রয়েছে। যারা বর্তমানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামের বিভিন্ন কমিটিতে আছেন তাদের পদত্যাগ করা সম্ভাবনা অনেকটা কম। কেননা তারা এক প্রকার কথাবার্তার মাধ্যমেই সেখানে গিয়েছেন।
কেন্দ্রীয় কমিটির এই সদস্য আরও বলেন, দীর্ঘ ধরে আমাদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে। কাজেই সবাইকে আমাদের চেনা-জানা। যারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্লাটফর্মে থাকতে চান তারা থাকবেন। আর যারা রাজনৈতিক দলে আসতে চান তারা আসতে পারবেন। তবে যেখান থেকেই আসবেন সেই পদ ছেড়ে আসতে হবে। চট্টগ্রাম বিশজনের অধিক লোক আছে যারা এতোদিন সাংগঠনিক কার্যক্রম চালাচ্ছিল। তারা হয়তো সামনের সারিতে থাকবেন।
যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) জুবায়েরুল আরিফ বলেন, আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলা কমিটি গঠনের কাজ হাত দেব। চট্টগ্রামে বেশ কয়েকজন সংগঠক রয়েছে। তারা সাংগঠনিক কাজ করছে। এদের মধ্যে কেউ চট্টগ্রাম মহানগরেও দায়িত্ব নিতে পারে। তবে এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা এখনো আলোচনা শুরু করিনি। শুরু করলে হয়তো বলতে পারবো কারা আসছে চট্টগ্রামে নতুন দলের নেতৃত্বে।
তিনি আরও বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি সবেমাত্র রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। কারা চট্টগ্রামে আলোচনার শীর্ষে আছেন তা এখনও বলা যাচ্ছে না। জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন এ দুটি প্ল্যাটফর্ম প্রেসার গ্রুপ হিসেবে থাকবে। তবে সেখান থেকে কেউ চাইলে রাজনৈতিক দলে আসতে পারবেন। তবে তাকে অবশ্যই ওই প্ল্যাটফর্মগুলোর পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে আসতে হবে।
দলটির কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য জুবায়েরুল মানিক বলেন, চট্টগ্রাম মহানগর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। এখানে যারা নেতৃত্বে আসবেন তাদেরকে অনেক বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। বিশেষ করে রাজনৈতিক দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে তাদেরকে। আমরা তাদেরকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, দখল বাণিজ্য, দুর্নীতি, ঘুষসহ সকল অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে চাই। একটি সুন্দর, নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ শহর মানুষকে উপহার দিতে চাই।
তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ স্বতন্ত্র একটি ছাত্র সংগঠন হিসেবে কাজ করবে। জাতীয় নাগরিক পার্টি রাজনৈতিক দল হিসেবে কাজ চালাবে।
কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠক রাসেল আহমেদ বলেন, নতুন দলকে নিয়ে চট্টগ্রামে ব্যাপক উৎসাহ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ আমাদের দলে যুক্ত হওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন। সেজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি খুব বেশি সময় ব্যয় করবো না। মহানগর থেকে একেবারে গ্রাম পর্যন্ত আমরা কমিটি দিব।
তিনি আরও বলেন, শীগ্রই আমরা এসব নিয়ে আলোচনায় বসবো। আমাদের কর্মপদ্ধতিগুলো ঠিক করে আমরা নির্ধারণ করবো কখন কোন কমিটি দেওয়া হবে। চট্টগ্রাম থেকে যারা কেন্দ্রীয় কমিটিতে এসেছেন তারাই ঠিক করবেন চট্টগ্রামে কারা নেতৃত্ব দিবেন। শুধু যে নাগরিক কমিটি থেকে নেতৃত্বে আসবেন তা নয়, বাইরে থেকেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ গণ্যমান্য রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ নতুন দলে যোগ দিতে পারেন।
ক্যাটাগরি:কভার নিউজচট্টগ্রামরাজনীতি