বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে ‘আন্তরাষ্ট্রীয় গুমপ্রক্রিয়ার’ অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে গুম কমিশনের দ্বিতীয় প্রতিবেদনে। ২০২৫ সালের ৪ জুন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে প্রতিবেদনটি তুলে দেয় কমিশন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই দেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ‘মৌখিক সমঝোতা’র ভিত্তিতে একে অপরের প্রয়োজন অনুযায়ী সন্দেহভাজন নাগরিকদের গুম করে সীমান্ত পেরিয়ে হস্তান্তর করা হতো। এই আদান-প্রদান চলেছে কোনো প্রকার আইনি চুক্তি বা আদালতের অনুমোদন ছাড়াই, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের চরম লঙ্ঘন।
কমিশনের ভাষ্যমতে, বাংলাদেশ থেকে গুম হওয়া অন্তত পাঁচজন ভুক্তভোগীর জবানবন্দি রয়েছে যাঁরা ভারতে পাচার হয়ে নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ আবার বাংলাদেশে ফিরে এসেও পুনরায় ডিজিএফআই বা র্যাবের হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের শিকার হয়েছেন এবং কখনো নিখোঁজও হয়ে গেছেন।
প্রতিবেদনে একটি ঘটনার বর্ণনায় বলা হয়—এক ব্যক্তিকে প্রথমে ভারতের গোয়েন্দা বাহিনী আটক করে। পরে বাংলাদেশের ডিজিএফআই ওই ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দেয়, এবং তাঁকে গোপনে বাংলাদেশে ফেরত আনা হয়। ফেরত আনার পর তাঁকে পুনরায় আটক করে নির্যাতন করা হয়।
কমিশন এই সমন্বয়কে ‘বিচারবহির্ভূত’, ‘রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহার’ এবং ‘মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া, স্বচ্ছতা এবং ন্যায়বিচারের ন্যূনতম শর্ত ছাড়াই যেভাবে ব্যক্তি অধিকার হরণ করা হয়েছে—তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কমিশন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদ অনুযায়ী যেকোনো বন্দীর আইনি সুরক্ষা, আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ এবং ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার রয়েছে। অথচ এই প্রক্রিয়ায় তা সম্পূর্ণরূপে উপেক্ষিত হয়েছে।
কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার নামে পরিচালিত এমন গোপন প্রক্রিয়া বন্ধে দুই দেশের মধ্যকার যেকোনো সমঝোতা বা সহযোগিতা যেন আন্তর্জাতিক আইন ও মানবাধিকারের কাঠামোর মধ্যে চলে, তা নিশ্চিত করতে হবে।
এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে চলা গুমের রাজনীতি ও তার পেছনের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার একটি দিক প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে আলোর মুখ দেখলো।