চট্টগ্রাম নগরের দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতা সমস্যা সমাধানে ২৭ বছর পর প্রথমবারের মতো পরিষ্কার করা হচ্ছে আগ্রাবাদের বক্স কালভার্ট। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) ২ কোটি ৬০ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের আওতায় নৌ বাহিনীর সহায়তায় এই কাজ শুরু হয়েছে গত মাসে। প্রকল্পের আওতায় ২ দশমিক ৯ কিলোমিটার দীর্ঘ কালভার্টের পাশাপাশি নাসির খাল ও লাল মিয়া ছড়াও পরিষ্কার করা হবে।
চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন গতকাল (সোমবার) বিদ্যুৎ ভবনের সামনে পরিদর্শনকালে জানান, ইতোমধ্যে বক্স কালভার্টের ১৭টি স্ল্যাবের মধ্যে ৭টি উন্মুক্ত করে পরিষ্কার করা হয়েছে, বাকি ১০টিতে কাজ চলছে। কাজটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ফায়ার সার্ভিস ও নৌবাহিনীর ডুবুরিরা সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকছেন।
মেয়র বলেন, “এটি একটি বিশাল কাজ, প্রায় পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ্যের সমান। এত বড় বক্স কালভার্ট এক–দেড় মাসে পরিষ্কার করা বিশাল চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আমাদের লক্ষ্য, সমন্বিত প্রচেষ্টায় জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম গড়ে তোলা।”
ডা. শাহাদাত অভিযোগ করেন, ১৯৯৮ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার অপরিকল্পিতভাবে এই কালভার্ট নির্মাণ করেছিল। “তারা এমনভাবে এটি নির্মাণ করেছিল যাতে ভবিষ্যতে এটি পরিষ্কার করা সম্ভব না হয়,” বলেন তিনি। তবে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, “সরকারি বরাদ্দ না পেলেও কর্পোরেশনের নিজস্ব অর্থায়নে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ চলবে।”
মেয়রের নেতৃত্বে নগরীর বিভিন্ন সেবা সংস্থা— সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড, সিডিএ, বন্দর কর্তৃপক্ষ, ওয়াসা, পানি উন্নয়ন বোর্ড, জেলা প্রশাসন, মেট্রোপলিটন পুলিশসহ— এক ছাতার নিচে কাজ করছে। বন্দর কর্তৃপক্ষ তাদের ড্রেজিং প্রকল্পের মাধ্যমে খালের মুখগুলো পরিষ্কার করছে।
সম্প্রতি নগরীতে ১৯০–১৯২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলেও আগের মতো জলাবদ্ধতা হয়নি বলে দাবি করেন মেয়র। তিনি জানান, “আমরা ইতোমধ্যে ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২৪টি খাল এবং ৮ কোটি টাকায় নালা পরিষ্কার করেছি। এই স্বল্প ব্যয়ে বিশাল কাজ হয়েছে সততা ও সমন্বয়ের মাধ্যমে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বক্স কালভার্টটি পরিষ্কার হলে আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, চৌমুহনী, পাঠানটুলী, গোসাইলডাঙ্গা, টাইগারপাসসহ বিভিন্ন এলাকার পানি নিষ্কাশন দ্রুত হবে। ফলে নগরবাসী বহু বছরের জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে।
চসিক সূত্র জানিয়েছে, বক্স কালভার্টের চওড়া সাড়ে ৩ মিটার এবং গভীরতা প্রায় ১০ ফুট। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে ১৯৯৮ সালে ২৯ কোটি টাকা ব্যয়ে এটি নির্মিত হলেও এর পর থেকে এটি কখনোই পুরোপুরি পরিষ্কার করা হয়নি। মেয়রের নতুন পরিকল্পনায় আরও ২০০টি খাল-নালা পরিষ্কারের প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে, যা নগরীর ১৬০০ কিলোমিটার নালা পরিষ্কার রাখবে।