চট্টগ্রামে ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে শরিক জাতীয় পার্টিকে (জাপা) দুটি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। ওই দুটি আসনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দিলেও পরে প্রত্যাহার করে নেয়। তবে নৌকা না থাকলেও এই দুই আসনে স্বস্তিতে নেই লাঙ্গলের প্রার্থীরা। তাদের জয়ের পথে বড় বাধা আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
ওই দুই আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা হলেন– চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে দলের কো- চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী, চান্দগাঁও) আসনে চট্টগ্রাম মহানগর সভাপতি মো. সোলায়মান আলম শেঠ।
চট্টগ্রাম রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রামে ১৬টি সংসদীয় আসনের মধ্যে নৌকা প্রতীক নির্বাচন করছে ১৪টিতে। এর মধ্যে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) ও চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন দুটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ায় দলীয় প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। অপরদিকে, জাতীয় পার্টি চট্টগ্রামে ১৪টি আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়েছে। তবে চট্টগ্রাম-১১ (বন্দর-পতেঙ্গা) এবং চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসনে প্রার্থী দিতে পারেনি দলটি।
জাতীয় পার্টি চট্টগ্রাম উত্তর জেলার সদস্য আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘সারা দেশে জাতীয় পার্টিকে এবার ২৬টি আসন ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে চট্টগ্রামে রয়েছে দুটি। এ দুটি আসনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী আমরা।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থীকে জেতাতে কেন্দ্র থেকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশনা থাকলেও তা মানছেন না কেউ। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ প্রভাবশালী নেতা কাজ করছেন না জাতীয় পার্টির দুই প্রার্থীর জন্য। আওয়ামী লীগের বড় অংশ কাজ করছে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীকে জেতাতে। এমনকি প্রচার-প্রচারণায়ও আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ লোকজনকে কাছে পাননি লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীরা।
চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন মোট আট জন। এর মধ্যে কেটলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা মুহাম্মদ শাহজাহান চৌধুরী। আওয়ামী লীগের বড় অংশ তার সঙ্গেই কাজ করছেন। এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির হায়দার চৌধুরী বাবুল।
বর্তমান সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির প্রার্থী ব্যারিস্টার আনিসের সঙ্গে নেই আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতা। অপরদিকে হাটহাজারীতে জাতীয় পার্টিরও নেই বড় কোনও ভোট ব্যাংক। যে কারণে জয় নিয়ে এবার দুশ্চিন্তায় আছেন আনিসুল ইসলাম। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুহাম্মদ শাহজাহান বলছেন, সুষ্ঠু এবং কারচুপিমুক্ত নির্বাচন হলে জয় তারই হবে।
হাটহাজারী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মো. আলমগীর বলেন, ‘ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ পর পর তিনবার হাটহাজারী থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এ এলাকায় অনেক উন্নয়ন করেছেন। যার সুফল বাসিন্দারা ভোগ করছেন। এ ছাড়া এখানে আওয়ামী লীগের দুজন স্বতন্ত্র প্রার্থী আছেন। তাদের নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত। সব মিলিয়ে জাতীয় পার্টি এ আসনে আবার জয়ী হবে বলে মনে করছি।’
এদিকে, চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী) আসনে জাতীয় পার্টির প্রাথী মো. সোলায়মান আলম শেঠকে সমর্থন দিয়ে দলীয় প্রার্থী প্রত্যাহার করেছে আওয়ামী লীগ। আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী ছাড়াও মোট ১০ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী না থাকলেও আছেন দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। তাদের একজন সাবেক চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক আবদুচ ছালাম। তিনি লড়ছেন কেটলি প্রতীক নিয়ে। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চসিক কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য বিজয় কুমার চৌধুরী। তিনি লড়ছেন ফুলকপি প্রতীক নিয়ে। এ আসনটিতে জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠের সঙ্গে নেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আওয়ামী লীগের বড় একটি অংশ কাজ করছে কেটলি প্রতীকের প্রার্থীর সঙ্গে। নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনসহ ছোট একটি অংশ কাজ করছেন অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয় কুমার চৌধুরীর পক্ষে।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী সোলায়মান আলম শেঠ অভিযোগ করেন, গণসংযোগে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশে পাননি তিনি। অথচ আওয়ামী লীগের লোকজন স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে মিটিং-গণসংযোগ করছেন। তারপরেও তিনি জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।