অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, আগামী এপ্রিলের মধ্যেই বাংলাদেশ একটি নির্বাচিত সরকার পাবে। সেই নির্বাচনের পর বর্তমান সরকার ‘চুপচাপ সরে যাবে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান-কে ১২ জুন দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস এ কথা বলেন।
সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, শেখ হাসিনার পতনের পর ২০২৪ সালের জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মাধ্যমে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন। সেই আন্দোলন এখনও সাধারণ মানুষের কাছে একটি "নতুন বাংলাদেশের" প্রতিশ্রুতি হয়ে আছে। এই নতুন রাষ্ট্রে দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন এবং মানুষের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে চান তিনি।
ড. ইউনূস বলেন, "সরকারের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি এমনভাবে ছড়িয়ে আছে যে, মানুষ এখন সরকারকে শত্রু হিসেবে দেখে। পাসপোর্ট থেকে শুরু করে ব্যবসার লাইসেন্স—সব কিছুতেই ঘুষ লাগে। জনগণ বিশ্বাস করে, সরকার তাদের কিছুই দেয় না—শুধু নেয়।"
তিনি জানান, তিনি এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করতে চান যেখানে সাধারণ মানুষকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়া হবে, এবং সরকার হবে জনগণের সেবক, শত্রু নয়।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, চলতি জুলাইয়ে আন্দোলনের এক বছর পূর্তির আগেই তিনি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে একটি ঐতিহাসিক সমঝোতা চুক্তি, ‘জুলাই সনদ’ সম্পন্ন করতে চান। এই চুক্তির মাধ্যমে নির্বাচন, দুর্নীতি প্রতিরোধ, ও জনকল্যাণ নিয়ে গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নের পথ সুগম হবে বলে আশা করেন তিনি। “এটি হবে শুধু একটি চুক্তি নয়, বরং একটি নতুন বাংলাদেশের ভিত্তি,” বলেন ইউনূস।
তিনি জানান, এরই মধ্যে কয়েকটি সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়েছে, যা নির্বাচনী ব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন, এবং প্রশাসনিক স্বচ্ছতা নিয়ে কাজ করছে। এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের জন্য এই চুক্তি হবে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
ড. ইউনূস স্বীকার করেন, বিএনপি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল হিসেবে এগিয়ে আছে এবং তারা দ্রুত নির্বাচনের জন্য চাপ দিচ্ছে। তবে তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পদে মেয়াদসীমা এবং সাংবিধানিক সংস্কার নিয়ে কিছু মতভেদ আছে। তবুও, ড. ইউনূস আশাবাদী—এই মতভেদ আলোচনা ও ঐকমত্যের মাধ্যমে সমাধান সম্ভব।
তিনি বলেন, "এখন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেভাবে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে বিরল।"
ড. ইউনূস চান, তাঁর দীর্ঘদিনের ‘সামাজিক ব্যবসা’ মডেল—যার মাধ্যমে ক্ষুদ্রঋণ ও সামাজিক উদ্যোগের মাধ্যমে মানুষের জীবনমান উন্নয়ন করা যায়—তা নতুন রাষ্ট্র কাঠামোতে বড় ভূমিকা রাখবে। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ মৌলিক খাতে এই মডেল কার্যকর করা হবে বলে জানান তিনি।
২০২৪ সালের আন্দোলনের মাধ্যমে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন দীর্ঘদিনের আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন ড. ইউনূস। তার নেতৃত্বে রাষ্ট্রের প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের চেষ্টা চলছে।