সম্প্রতি ঢাকার উত্তরা এলাকায় মাইলস্টোন কলেজের কাছে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি এফ-৭ বিইজিআই প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এটি একটি নিয়মিত প্রশিক্ষণ মিশনের সময় উড্ডয়ন করেছিল। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর আবারও আলোচনায় এসেছে বিমানটির নাম এবং 'উড়ন্ত কফিন' শব্দটি। এই ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, কেন এমন অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা ঘটলো।
বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর এফ-৭ বিইজিআই হলো চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ (Chengdu Aircraft Industry Group) নির্মিত একটি একক ইঞ্জিনবিশিষ্ট ইন্টারসেপ্টর ফাইটার জেট। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে এটি প্রশিক্ষণ ও বহুমুখী (মাল্টিরোল) উভয় কাজেই ব্যবহৃত হয় এবং এটি F-7 এর সবচেয়ে উন্নত সংস্করণগুলোর মধ্যে একটি, যা বাংলাদেশের নির্দিষ্ট চাহিদা পূরণের জন্য তৈরি হয়েছে।
বিমানটিতে উন্নত এভিওনিক্স, ককপিটে MFD, HUD, হেলমেট মাউন্টেড সাইট এবং SY-80 পালস ডপলার রাডার রয়েছে। এটি PL-9C এয়ার-টু-এয়ার মিসাইল, লেজার ও জিপিএস গাইডেড বোমা, রকেট এবং কামান সহ ৩০০০ কেজি পর্যন্ত অস্ত্র বহন করতে পারে। WP-13F ইঞ্জিন চালিত এই বিমানের সর্বোচ্চ গতি প্রায় Mach 2 এবং যুদ্ধ পরিসীমা প্রায় ৮৫০ কিলোমিটার। প্রশিক্ষণের জন্য FT-7 নামে একটি ডেডিকেটেড টুইন-সিট ট্রেইনার সংস্করণও রয়েছে।
তবে বিমানটির খারাপ নিরাপত্তা রেকর্ড, যুদ্ধক্ষেত্রে কম কার্যকারিতা এবং কিছু ঐতিহাসিক কারণে এটি পাইলট বা সাধারণ মানুষের কাছে বেশ বিপজ্জনক বলে মনে হয়। তাছাড়া এটির দুর্ঘটনার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। আর এসব কারণে এই প্রশিক্ষণ বিমানটিকে ‘উড়ন্ত কফিন’ (Flying Coffin) বলা হয়ে থাকে। যদিও F-7 BGI বিমানকে "উড়ন্ত কফিন" বলা হয় এমন নির্দিষ্ট কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই, তবে কিছু কারণে এই ধরনের শব্দগুলো আলোচনায় আসতে পারে। যেমন:
নিরাপত্তা রেকর্ড ও দুর্ঘটনার ইতিহাস: F-7 বিমান সিরিজের দুর্ঘটনার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানসহ বিভিন্ন দেশে এই বিমানের সঙ্গে বেশ কিছু মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে, যার ফলে অনেক পাইলট নিহত হয়েছেন। বিশেষ করে প্রশিক্ষণ চলাকালীন বা টেক-অফ/ল্যান্ডিং-এর সময় দুর্ঘটনা বেশি হয়। রাজধানীর উত্তরায় আজও F-7 BGI প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে, যা এই ধরনের আলোচনাকে উস্কে দিতে পারে।
পুরনো ডিজাইন ও প্রযুক্তি: F-7 বিমানটি মূলত সোভিয়েত ইউনিয়নের মিগ-২১ এর উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা ১৯৫০-এর দশকের একটি ডিজাইন। যদিও F-7 BGI সংস্করণে অনেক আধুনিকীকরণ করা হয়েছে, বিমানের মৌলিক ডিজাইনটি পুরনো হওয়ার কারণে কিছু নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকেই যায়। আধুনিক যুদ্ধবিমানের তুলনায় এর সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে।
পাইলটদের মধ্যে আলোচনা: কিছু পুরনো মডেলের ক্ষেত্রে পাইলটদের মধ্যে "উড়ন্ত কফিন" বা "উইডো মেকার" (বিধবা সৃষ্টিকারী) -এর মতো উপাধি প্রচলিত ছিল, যা বিমানটির বিপজ্জনক প্রকৃতির ইঙ্গিত দিত। এই ধরনের শব্দ পরবর্তীতে নতুন সংস্করণগুলোর ক্ষেত্রেও লোকমুখে চলে আসতে পারে।
ইজেকশন সিস্টেমের সমস্যা: কিছু দুর্ঘটনায় দেখা গেছে পাইলট ইজেক্ট করতে সক্ষম হননি, অথবা ইজেকশন সিস্টেম যথাসময়ে কাজ করেনি, ফলে জীবনহানির ঘটনা ঘটেছে।
কঠিন নিয়ন্ত্রণ: F-7 বিমানের হ্যান্ডলিং তুলনামূলকভাবে কঠিন, বিশেষ করে নতুন প্রশিক্ষণরত পাইলটদের জন্য। এর ফলে মানবিক ভুলের ঝুঁকি বাড়ে।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান F-7 উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি ভবনে বিধ্বস্তের ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৯ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় আরও অর্ধশতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
সিটিজিপোস্ট/এসএমএফ