ইঞ্জিন সংকট কাটিয়ে তুলতে এবার নতুন করে আরো ৩০টি ইঞ্জিন (মিটারগেজ লোকোমোটিভ) ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে লোকোমাস্টারদের (ট্রেন চালক) বিভিন্ন মতামত ও প্রস্তাব তুলে ধরেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন।
সংগঠনটির দাবি, ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা কাজে লাগালে লোকোমোটিভ আরও কার্যকর ও নিরাপদ হবে।
বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক দপ্তরে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠি থেকে এ তথ্য জানা যায়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, তীব্র ইঞ্জিন (লোকোমোটিভ) সংকটের সময়ে নতুন মিটারগেজ লোকোমোটিভ কেনার সিদ্ধান্ত বেশ প্রশংসনীয়। সংগঠনের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে, বাংলাদেশ রেলওয়েতে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি দেশের উপযোগী উন্নতমানের লোকোমোটিভ কেনার সিদ্ধান্ত নেবে।
এছাড়াও চিঠিতে নতুন ইঞ্জিন ক্রয়ে লোকোমাস্টারদের মতামত হিসেবে মোট ১১টি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
এর মধ্যে প্রথমেই লোকোমোটিভের ডিজাইন ২৯০০ বা ৬৬০০ সিরিজের মতো করার দাবি জানানো হয়েছে। দৈর্ঘ্য ২৯০০ সিরিজের মতো হলে সুবিধা হবে এবং লং হুড সমস্যার সমাধানে ডাবল ক্যাব লোকোমোটিভ আনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও নতুন ইঞ্জিনে উন্নতমানের এসি, কার্যকর ফ্যান, বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, লম্বা মানুষের দাঁড়ানোর মতো উচ্চতা, লোকোমাস্টার ও সহকারী চালকের সিগনাল বিনিময়ের সুবিধা এবং ইন্সপেক্টরদের জন্য সিট রাখার দাবি জানানো হয়েছে।
লোকোমাস্টারদের স্বাস্থ্যঝুঁকি এড়াতে মানসম্মত শৌচাগার সংযুক্ত করার দাবিও জানানো হয়েছে এই চিঠিতে। এছাড়াও চিঠিতে দুর্ঘটনা মোকাবেলায় আধুনিক শক্তিশালী ক্যাব ফ্রেম, সামনের ও পিছনের প্রেসার পাইপ কার্যকর রাখার ব্যবস্থা রাখার কথা বলা হয়েছে।
লোকোমাস্টারা ৬টি ট্রাকশন মোটর ও বেশি হর্স পাওয়ারের লোকোমোটিভ আনার দাবি জানান। যাতে ১-২টি মোটর অকেজো হলেও পর্যাপ্ত টান পাওয়া যায়।
এদিকে ইঞ্জিনের ব্রেক সিস্টেমও উন্নত করার কথা বলেছেন লোকোমাস্টাররা। তারা এয়ার ও ভ্যাকুয়াম ব্রেকের সাথে ডাইনামিক ব্রেক সংযুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন। এছাড়াও চালকের রোটেটিং সিট, উন্নত ভিউ, কন্ট্রোল প্লেসমেন্ট, চার্জিং পোর্ট ও রেডিও সংযোগ, রাত, বৃষ্টি ও কুয়াশায় স্পষ্ট ভিউ নিশ্চিত করতে স্বচ্ছ লুকআউট গ্লাস, এলইডি প্রজেক্টর লাইট ও কার্যকর উইন্ডো উইপার, সামনের ও পিছনের ক্যামেরা সংযুক্ত করার দাবি জানানো হয়েছে।
এছাড়ারো জ্বালানি তেল, লুব্রিকেটিং অয়েল ও পানি সহজে দেখা ও পরীক্ষা করার সুবিধা এবং লোকোমোটিভ আমদানির সাথে সাথে পর্যাপ্ত স্পেয়ার পার্টস সরবরাহ ও বিদেশে উন্নত প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে উক্ত চিঠিতে।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, নিয়মিত ও পরিকল্পিতভাবে লোকোমোটিভ ক্রয়ের মাধ্যমে সংকট দূর এবং পরিবেশবান্ধব রেলওয়ে দেশের প্রধান যাত্রী ও পণ্য পরিবহন মাধ্যম হিসেবে পরিণত হবে।
জানতে চাইলে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান সিটিজি পোস্টকে বলেন, এই সকল ইঞ্জিন যারা ব্যবহার করবেন তাদের মতামত না নিয়ে সঠিক ও উন্নত ট্রেনিং না দিয়ে যতই ভালো ইঞ্জিন আনুক না কেন ভালো সেবা আশা করা যাবে না।
তিনি বলেন, আমরা চাই কর্তৃপক্ষ আমাদের প্রস্থাব গুলোর দিকে নজর দিক, যাতে লোকোমোটিভ আরও কার্যকর ও নিরাপদ হয়।
সিটিজিপোস্ট/এইচএস