ইঞ্জিন ক্রয়ে দুর্নীতি
বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্রয় প্রক্রিয়ায় দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক মহাপরিচালকসহ তিন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক সূত্রে জানা যায়, রেলের ১০টি মিটারগেজ ইঞ্জিন ক্রয়ে অনিয়ম ও জালিয়াতির মাধ্যমে সরকারের ৩২২ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হওয়ায় দুদক মামলাটি দায়ের করেছে। দুদকের উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
উপ-পরিচালক আকতারুল ইসলাম বলেন, "অভিযুক্ত কর্মকর্তারা নিজেদের যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন।"
তিনি আরও জানান, "প্রতারণা, বিশ্বাসভঙ্গ ও জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রের বিপুল অঙ্কের ক্ষতি করেছেন তারা।"
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামিরা ইঞ্জিন ক্রয়ের চুক্তি ও টেন্ডারের স্পেসিফিকেশন নিজেদের স্বার্থে পরিবর্তন করেন। তারা আমদানি-পূর্ব পর্যবেক্ষণ (প্রি-শিপমেন্ট ইন্সপেকশন) ছাড়াই নিম্নমানের ইঞ্জিন গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে চুক্তির শর্ত পূরণ না হলেও কাগজপত্রে সব ঠিক আছে বলে দেখিয়ে ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার বেশি আত্মসাৎ করেন। এতে সরকারের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৩২২ কোটি ৬৮ লাখ ৮৯ হাজার টাকা।
মামলায় আসামি করা রেলওয়ের তিন শীর্ষ কর্মকর্তা হলেন: সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (আরএস) মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী ও সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (ডেভেলপমেন্ট) মোহাম্মদ হাসান মনসুর।
আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারাসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায় মামলা করা হয়েছে।
রেলের লোকসান
বাংলাদেশ রেলওয়ের আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গেলো পাঁচ বছরে সংস্থাটি গড়ে বছরে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার কোটি টাকার লোকসান গুনছে।
রেলওয়ে সূত্র ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাওয়া তথ্যমতে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে রেলের লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এছাড়াও ২০২০-২১ অর্থবছরে ১ হাজার ৬৮০ কোটি, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১ হাজার ৭৫০ কোটি, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ১ হাজার ৬১০ কোটি ও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে লোকসান হয়েছে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
অন্যদিকে একই সময়ে উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে গড়ে ৮ থেকে ১০ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু এর বিনিময়ে সেবার মান বা আয় না বাড়লেও যাত্রী পরিবহন ক্ষমতা ও সময়নিষ্ঠতা দুই ক্ষেত্রেই পিছিয়েছে রেল।
এছাড়াও পুরোনো ইঞ্জিন, নিম্নমানের যন্ত্রাংশ এবং রক্ষণাবেক্ষণে অনিয়মের কারণে প্রতিদিনই যাত্রীদের ভোগান্তি বাড়ছে। দেরিতে ট্রেন ছাড়া, মাঝপথে বিকল হওয়া, এমনকি দুর্ঘটনার আশঙ্কা এখন নিয়মিত চিত্র।
চট্টগ্রাম নগরীর রাকিব উদ্দীন নামের এক যাত্রী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, "ট্রেনে সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছানো এখন স্বপ্নের মতো।"
রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলে টাকা খরচ হচ্ছে, কিন্তু যাত্রীরা সুবিধা পাচ্ছেন না।
এ ব্যাপারে দুদক জানিয়েছে, মামলার তদন্তে অন্য কোনো ব্যক্তি বা সম্পদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
সিটিজি পোস্ট/এইচএস