টাঙ্গাইল শহরের সন্তোষ এলাকায় মাছ ব্যবসায়ী আজহার আলীর কাছে ‘কিলার গ্যাংয়ের’ নামে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা চিঠি দেওয়ার ঘটনায় জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) ও স্থানীয় থানা পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে বিএনপির পাঁচ নেতাকে গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার (২ আগস্ট) ভোরে সন্তোষ এলাকা থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন: টাঙ্গাইল শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক জুবায়ের আহমেদ, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক গোলাম রব্বানী, ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম এবং সাব্বির হোসেন।
পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে ‘কিলার গ্যাংয়ের’ নামে চাঁদা চেয়ে আজহার আলীর মাছের আড়তের কর্মচারী নিশার হাতে একটি চিঠি তুলে দেওয়া হয়। চিঠিটি শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। একই দিন আজহার আলী টাঙ্গাইল সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ জানান, গ্রেপ্তারদের মধ্যে আবদুল্লাহ আল মামুন ও সাব্বির হোসেন চাঁদাবাজির বিষয়টি স্বীকার করেছেন। আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন তাঁরা। সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বাদল কুমার চন্দ্র এই জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
চিঠিতে লেখা ছিল, চাঁদার কথা কাউকে জানালে বা আইনি পদক্ষেপ নিলে ব্যবসায়ীর লাশ যেন পরিবার খুঁজে না পায়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আরও বলা হয়, প্রশাসন সব সময় পাশে থাকবে না, তাই বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যেন নিজে ও পরিবার নিরাপদ থাকে। চিঠিতে নির্দেশ দেওয়া হয় ৫ লাখ টাকা ৩ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টায় কাগমারীতে মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসানের বাড়ির সামনে নির্ধারিত একটি গাছের নিচে রাখতে।
ভুক্তভোগী আজহার আলী বলেন, “গত ৫০ বছরে টাঙ্গাইলে এমন চিঠি দিয়ে চাঁদা চাওয়ার ঘটনা ঘটেনি। চিঠিটি পেয়ে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।”
পুলিশ জানায়, ঘটনার তদন্তে মাছের আড়তের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চিঠি পৌঁছে দেওয়া ব্যক্তিকে শনাক্ত করে গ্রেপ্তার করা হয়। তার তথ্যের ভিত্তিতে বাকি চারজনকেও আটক করা হয়।
এদিকে, বিএনপির নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। টাঙ্গাইল শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইজাজুল হক সবুজ বলেন, “নেতাকর্মীদের ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে।” জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফরহাদ ইকবাল জানান, “আমরাও দলীয়ভাবে তদন্ত করছি। প্রমাণ মিললে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, “চিঠি দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চাঁদাবাজ যেই হোক না কেন, তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
সিটিজি পোস্ট/ এসএইচএস