আজ মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) সকালে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে সাধারণ আইনজীবীদের ব্যানারে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওটিতে এমপি কমল শিক্ষককে জামিন না দেওয়া বিচারককে ‘ভাত খেতে দেবেন না’ ও ‘চাকরি করতে দেবেন না’ বলে হুমকি দেন।

এমপি সাইমুম সরওয়ার কমল সেই বক্তব্যে বলেন, “রামুর একজন শিক্ষক। নাম জসিমউদ্দিন। তার বিরুদ্ধে দ্রুতবিচার আইনে মামলা হয়েছে। আমি জজ সাহেবের সঙ্গে কথা বলেছি। দ্রুতবিচার, ঘটনা মিথ্যা, কোনো ঘটনা নেই। জমি নিয়ে গণ্ডগোল। সেখানে কোনো মারামারি হয়নি। কোনো ভিডিও ফুটেজ নেই। কোনো স্বাক্ষী নেই কিন্তু একজন পেশকার একজন জজকে ম্যানেজ করে একটা দ্রুতবিচার আইনে মামলা দিয়েছে। ইনশাআল্লাহ আমি বেঁচে থাকতে তাকে (ওই শিক্ষককে) জেলে যেতে দেব না। তাকে যদি জেলে যেতে হয় তাহলে আমি বেঁচে থাকতে যে জজ সাহেব মিথ্যা মামলা করেছে, তাকে আমি জীবনে ভাত খেতে দেব না। তাকে আমি চাকরি করতে আর দেব না। এই আমার কথা।”

এরপর তিনি আরও বলেন, “শিক্ষকের বিপদে শিক্ষককে আসতে হবে। একজন শিক্ষকের বিপদে সব শিক্ষককে একসঙ্গে জাগতে হবে। কোনো শিক্ষক যদি কোথাও অসম্মানিত হয় তা হলে আমার আসনের প্রত্যেকটি স্কুল একসঙ্গে বন্ধ করে দিতে হবে। শিক্ষক সমিতি, প্রতি মাসে আপনারা মিটিং করবেন। আপনাদের সম্মান রক্ষার্থে, জীবন রক্ষার্থে, সম্পদ রক্ষার্থে এই সমিতি কার্যকর ভূমিকা যাতে পালন করে।”

আইনজীবীরা এমপি কমলের এ বক্তব্যকে বিচারককে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়া এবং আদালত অবমাননার সামিল বলে দাবি করছেন। তার এ বক্তব্যের প্রতিবাদে আয়োজিত মানববন্ধনে আইনজীবীরা বলেন, কোনো মামলায় গরমিল দেখলে একজন এমপি হিসেবে তিনি জেলা জজ মহোদয়কে বলে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাইতে পারতেন। আর এটাই ছিল সঠিক পথ কিন্তু তিনি খলনায়ক ও গডফাদারের ভাষায় আদালত ও বিচারককে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। আবার সস্তা জনপ্রিয়তা নিতে তা রেকর্ড করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন।

মানববন্ধনে আরো বলা হয়, শিক্ষকদের নিয়ে এত দরদ দেখানো এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের বিরুদ্ধে এলাকার অবসর নেয়া প্রবীণ শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ আছে। লাঞ্ছনার শিকার শিক্ষক সুনীল কুমার শর্মা সংসদ সদস্য কমলকে শিশুকালে পড়িয়েছিলেন।

মানববন্ধনে দাবি করা হয়, স্বাধীন বিচার বিভাগের বিরুদ্ধে একজন আইনপ্রণেতার ঔদ্ব্যত্তপূর্ণ বক্তব্য বিচার বিভাগের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার সংকট তৈরি করবে।

তারা এমপি কমলকে তার বক্তব্যের জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

আইনজীবী মাহবুবুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন সিনিয়র আইনজীবী আমির হোছাইন, নুর মুহাম্মদ মামুন, খোরশেদ আলম, নুরুল ইসলাম নুরু, মাহবুবুর রহমান, আবদুর রহিম, রিদুয়ান আলী, মুহাম্মদ শাহীন প্রমূখ।

মানববন্ধনে নারী আইনজীবীসহ শতাধিক আইনজীবী অংশগ্রহণ করেন। তবে এ সম্পর্কে এমপি সাইমুম সরওয়ার কমলের বক্তব্য জানা যায়নি।