বিমল শীল পেশায় একজন পল্লিচিকিৎসক। বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সাধনপুর গ্রামের শীলপাড়ায়। তবে থাকেন চট্টগ্রাম শহরে। ২০ বছর আগের এক রাত বিমলের জীবনটা তছনছ করে দেয়। ওই রাতে মা–বাবা, ভাই-ভাবিসহ ১১ স্বজনকে হারান বিমল। শীলপাড়ার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে হত্যা করা হয় তাঁদের। কোনোরকমে বাড়ি থেকে পালিয়ে প্রাণে বাঁচেন বিমল।
সেই থেকে বিমলের আরেক লড়াই শুরু। ২০ বছর ধরে আদালতের বারান্দায় ঘুরে ফিরছেন তিনি। কিন্তু আজও স্বজন হারানোর বিচার পাননি। মামলা চলছে। একের পর এক তারিখ পড়ছে। সাক্ষী না আসায় মামলার কার্যক্রম আগানো যাচ্ছে না। সেই সঙ্গে অপেক্ষা ঘুচছে না স্বজন হারানো বিমলের। মিলছে না বিচার।
আদালতে ঘুরতে ঘুরতে এখন ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত-হতাশ বিমল। তিনি বলেন, ‘বিচারের আশা আর করি না। ২০ বছর ধরে ঘুরতে ঘুরতে আমি এখন ক্লান্ত।’
দেশজুড়ে আলোচিত ওই হত্যার ঘটনার ২০ বছর পূর্তি কাল শনিবার।
ওই রাতে যা ঘটেছিল
সময়টা ২০০৩ সালের ১৮ নভেম্বর। ওই রাতে চট্টগ্রামের বাঁশখালীর শীলপাড়ায় বিমলদের বাড়ির সবাইকে ঘরে আটকে বাইরে থেকে তালা দিয়ে আগুন দেওয়া হয়। ঘটনাচক্রে পালিয়ে প্রাণে বাঁচলেও একসঙ্গে ১১ স্বজনকে হারান বিমল।
বাঁশখালীতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক পরিবারের ১১ জনকে একসঙ্গে পুড়িয়ে হত্যা করার এ ঘটনা ওই সময় দেশজুড়ে তুমুল আলোচিত-সমালোচিত হয়েছিল। ওই সময় জাতীয় সংসদের বিরোধী দলের নেতা ছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হত্যাকাণ্ডের পর তিনি বাঁশখালী ছুটে গিয়েছিলেন।
বিমলের নতুন লড়াই
একসঙ্গে ১১ স্বজন হারানোর পর মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন বিমল। তবে আইনি লড়াই চালিয়ে যান, যা আজও চলছে। এখনো বিচারের অপেক্ষায় দিন গুনছেন তিনি।
হত্যাকাণ্ডের পরপর বিমল শীল হত্যা মামলা করেন। আদালত সূত্রে জানা যায়, ঘটনার ২৫ মাস পর পুলিশের পক্ষ থেকে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। তবে তাতে বাঁশখালীর বিএনপি নেতা আমিনুর রহমানের নাম বাদ দেওয়া হয়। এ অভিযোগপত্রের বিষয়ে নারাজি দেন বাদী।
এর পরিপ্রেক্ষিতে আদালত পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। দুই বছর পর পুলিশ আবারও আমিনুরকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। আবারও বাদী নারাজি দেন। এরপর সর্বশেষ চতুর্থ দফায় ২০১১ সালের ৯ জানুয়ারি আমিনুর রহমানসহ ৩৯ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ সিআইডি।
তৃতীয় অতিরিক্ত চট্টগ্রাম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলাটির বিচার চলছে।
মামলার সাক্ষী ৫৭ জন। ২০ বছরে মাত্র ২৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। আর আসামিদের মধ্যে ১৮ জন পলাতক। ১৮ জন জামিনে আছেন। আর কারাগারে আছেন একমাত্র আমিনুর। একজনের নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
আমিনুর রহমান দাবি করেছেন, তিনি রাজনীতি করেন। এ কারণে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাঁর নাম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে এক আসামির নাম রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করেও নেওয়া হয়েছে।
৯ নভেম্বর মামলাটির সর্বশেষ শুনানির দিন ধার্য ছিল। তবে সাক্ষী না আসায় শুনানি হয়নি। আগামী বছরের ৮ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।