চট্টগ্রামের চন্দনাইশের মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে কোচিংয়ের নামে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হচ্ছে। ফরম পূরণের জন্য বোর্ড নির্ধারিত ফি’র অতিরিক্ত টাকাও আদায় করছে কোন কোন স্কুল। বেশিরভাগ বিদ্যালয় প্রধানরা স্বীকার করেছেন কোচিং বাবদ অতিরিক্ত আদায়ের বিষয়টি।
এবার চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড ফরম পূরণের জন্য বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২ হাজার ১৪০ টাকা, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ২ হাজার ২০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছে। এর বাইরে অতিরিক্ত টাকা আদায় না করতে শুরুতেই সতর্ক করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
অথচ গাছবাড়িয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ছাড়া বেশিরভাগ বিদ্যালয়ে ফরম পূরণ ও কোচিংয়ের নামে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া নির্বাচনী পরীক্ষায় অকৃতকার্যদের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে আরও ৫শ থেকে ১ হাজার টাকা বেশি। কোচিং ক্লাসের জন্য নির্ধারিত প্রকাশনীর টেস্ট পেপার কিনতে বাধ্য করার অভিযোগও উঠেছে বেশ কয়েকটি বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে।
অভিভাবকদের অভিযোগ, ফরম ফিলাপের সময়ে এ অর্থ আদায় করা হচ্ছে যাতে অভিভাবকদের জিম্মি করে এ টাকা আদায় করা যায়। টাকা আদায়ের বিপরীতে তারা কোন রশিদও দিচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে কাউকে রশিদ দিতে হলে তাতে নানা ফি’ জুড়ে দিচ্ছেন। স্কুল ম্যানেজিং কমিটি ও শিক্ষকরা মিলে এ টাকা লুটপাটের জন্য আদায় করছেন। প্রতিবছরই এভাবে টাকা তুললে বোর্ডের ফি র্নিধারণ করে দেওয়ার কি প্রয়োজন বলেও প্রশ্ন তুলেন অভিভাবকরা।
জানা গেছে, গাছবাড়িয়া মমতাজ বেগম স্কুল এন্ড কলেজে কোচিং ও উন্নয়ন ফিসহ বিজ্ঞান বিভাগে ৩ হাজার ২৬০ টাকা ও ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ৩ হাজার ১৪০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। জাফরাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রত্যেক বিভাগ থেকে ফরম পূরণ বাবদ তিন হাজার টাকা করে, পূর্ব সাতবাড়িয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে, বোর্ড নির্ধারিত ফি’র বাইরে কোচিং বাবদ ১ হাজার টাকা বেশি, কেশুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিভাগে ৩ হাজার ৫০ টাকা ও ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগে ২ হাজার ৯৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ধোপাছড়ি উচ্চ বিদ্যালয়ে কোচিংয়ের নামে ১ হাজার টাকা, হাশিমপুর এম.কে.ইউ উচ্চ বিদ্যালয়ের বোর্ড নির্ধারিত ফি ও অতিরিক্ত কোচিং ক্লাস বাবদ সাড়ে ৩ হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া শুচিয়া রাম কৃষ্ণ উচ্চ বিদ্যালয়ে বোর্ড নির্ধারিত ফি’র বাইরে কোচিংয়ের জন্য টাকা আদায় করা হচ্ছে। এসব বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষকরা অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন।
মোশাররফ হোসেন মিশু নামে এক অভিভাবক বলেন, ফরম ফিলাপের জন্য বলে আমার কাছ থেকে ৩ হাজার ১শ টাকা নিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। শিক্ষা বোর্ড ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে আমি এ নিয়ে অভিযোগ করবো।
উপজেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে চন্দনাইশ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহা বলেন, ‘কেন্দ্র ও বোর্ড ফি ছাড়া অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কোনও সুযোগ নাই। কোচিংয়ের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা নিলে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সরকার কোচিং নিষিদ্ধ করেছে, এরপরও যদি কোনো প্রতিষ্ঠান কোচিংয়ের নামে টাকা তুলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহমুদা বেগম বলেন, ‘মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়টি সরেজমিনে দেখার জন্য। তিনি সরেজমিনে গিয়ে দেখবেন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’’
চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ দিদারুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার বিধান নেই। নির্ধারিত ফি ছাড়া যারা অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।