স্টুডেন্ট ফার্স্ট নীতিকে সামনে রেখে চাকসু নির্বাচনে 'বিনির্মান শিক্ষার্থী ঐক্য'র ইশতেহার ঘোষণা
চবি প্রতিনিধি | সিটিজি পোস্ট
প্রকাশিত হয়েছে: ১০ অক্টোবর, ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (চাকসু) নির্বাচনে ৭টি খাতে ৫০টি ইশতেহার ঘোষণা করেছে 'বিনির্মান শিক্ষার্থী ঐক্য' প্যানেল।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্ত্বরে এ ইশতেহার ঘোষণা করে তারা। এসময় সংবাদ সম্মেলনে ইশতেহার পাঠ করেন ভিপি প্রার্থী আবির বিন জাবেদ ও জিএস প্রার্থী চৌধুরী তাসনিম জাহান শ্রাবণ।
এসময় তারা ৭টি খাতে বিভিন্ন ইশতেহার ঘোষণা করে। ঘোষিত সাত দফা প্রস্তাবনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন, স্বাস্থ্য, আবাসন ও খাদ্য, প্রশাসন, গবেষণা ও একাডেমিক কার্যক্রম, নিরাপদ ও সবুজ ক্যাম্পাস এবং শিক্ষার্থীদের সার্বিক সুবিধা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি তুলে ধরা হয়।
ইশতেহার ঘোষণার আগে লিখিত বক্তব্যে ভিপি প্রার্থী আবির বিন জাবেদ বলেন, “বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ক্যাম্পাস হওয়া সত্ত্বেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় তার পূর্ণ সম্ভাবনার অতি সামান্য অংশই কাজে লাগাতে পেরেছে। প্রায় প্রত্যেকটি র্যাংকিংয়ে চবির অবস্থান তলানিতে। শিক্ষা-গবেষণায় অগ্রগতি তো দূরের কথা, শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যসম্মত আবাসন, মানসম্মত খাবার ও নিরাপদ যাতায়াতের মতো ন্যূনতম মৌলিক চাহিদাগুলোও আজ দুরাশা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “দীর্ঘদিনের বঞ্চনা ও প্রশাসনের বিমাতাসুলভ আচরণের অবসান ঘটিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রকৃত অর্থে শিক্ষার্থীবান্ধব ক্যাম্পাসে রূপ দিতে আমরা ‘স্টুডেন্ট ফার্স্ট’ নীতিতে কাজ করব।”
পরিবহন খাতে ইশতেহার: শাটলের শিডিউল বাড়ানো এবং প্রত্যেক শাটলে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আশেপাশের উপজেলাগুলোতে (ফটিকছড়ি, রাউজান, মীরসরাই, সীতাকুণ্ড, বোয়ালখালী, আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম মহানগর) শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে বাস সার্ভিস চালু করা।
নারীদের জন্য শাটলে আলাদা বগির ব্যবস্থা করা, ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরে চক্রাকার বাস সার্ভিস চালু করা অথবা যথেষ্ট পরিমাণ ই-কার নিশ্চিত করা।
স্বাস্থ্য খাতে ইশতেহার: শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবীমা চালু করা, যার আওতায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক চবি শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাবে,
চবি মেডিকেলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সংখ্যা বাড়ানো, বসার ব্যবস্থা করা এবং চবি মেডিকেলকে আধুনিক মেডিকেলে রূপান্তর করা, শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের পরামর্শে জন্য নিয়মিত সাইকোলোজিস্ট বসার ব্যবস্থা করা, এম্বুলেন্স এর সংখ্যা বৃদ্ধি করা।
প্রতিটি হলে ফার্মেসি সুবিধা চালু করা, চবি মেডিকেলে এন্টিভেনম, র্যাবিস সহ অন্যান্য ভ্যাক্সিনেশন সুবিধার ব্যবস্থা করা,
এবং ক্রমান্বয়ে চবি মেডিকেলকে ন্যূনতম ৩০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে উন্নীত করা।
আবাসন ও খাদ্য খাতে ইশতেহার: আবাসন সংকট নিরসনের জন্য স্বল্পমেয়াদী সমাধান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বাড়ি ভাড়া নিয়ে হোস্টেল সুবিধা চালু করা, দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসেবে নতুন হল নির্মাণের ব্যবস্থা করা, নতুন সেশনের অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রতিবছর ন্যূনতম ১০০০ জনকে আবাসন ভাঙার ব্যবস্থা করা, চালু থাকা হলগুলোকে স্বচ্ছন্দে বাসযোগ্য করতে যথেষ্ট সংস্কারের ব্যবস্থা করা।
হলের খাবারের মান স্বাভাবিক পুষ্টিকর খাবারের মানে উন্নীত করা, খাবারের খাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তুকি বাড়ানো, বিশ্ববিদ্যালয়ের কটেজে বাস করা শিক্ষার্থীদের হলের ডাইনিং এ খাবারের ব্যবস্থা করা।
প্রশাসনিক খাতে ইশতেহার: জটিলতা দূর করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামোকে শিক্ষার্থীবান্ধব করে তোলা, ভুল যার জরিমানা তার, প্রশাসনের ভুলের মাঙ্গল শিক্ষার্থীদের দেয়া বন্ধ করা হবে, প্রশাসনিক সকল সেবা ডিজিটাইজ করা এবং IT cell এর সেবাকে সহজ ও শিক্ষার্থীবান্ধব করে তোলা।
গবেষণা ও একাডেমিক খাতে ইশতেহার: গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়ানো, একাডেমিক গবেষণায় নিয়োজিত শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ন্যূনতম ফান্ডের ব্যবস্থা করা, প্রতিটি কোর্সে শিক্ষকদের একাডেমিক নিয়মিত হিসেবে নির্ধারিত সংখ্যক ক্লাস নেয়া নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষকদের মূল্যায়ন ব্যবস্থা চালু করা, তাছাড়া পৃথিবীর অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে স্কলারশিপের জন্য চুক্তির ব্যবস্থা করা।
শিক্ষার্থীদের স্মার্ট আইডি কার্ডের ব্যবস্থা এবং ডিজিটাল সেন্ট্রাল ডেটাবেইস তৈরি করা, যার আওতায় শিক্ষার্থীরা একাডেমিক সুবিধা, ব্যাংকিং সুবিধাসহ যাবতীয় সব সুবিধা গ্রহণ করতে পারবে, নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির সাথে সাথেই একাডেমিক ই-মেইলের ব্যবস্থা করা, কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির আধুনিকায়ন এবং শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা।
সেশন জট নিরসনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের একসাথে শিক্ষাজীবন শুরু এবং একই সাথে শিক্ষাজীবন শেষ করার ব্যবস্থা করা, একাডেমিক কারিকুলাম রিভিউ কমিশন গঠন করা এবং শিক্ষার্থীদের নিজ ডিপার্টমেন্টের বাইরে চবিতে মাস্টার্সের সুযোগের ব্যবস্থা করা।
শিক্ষার্থীদের সুবিধা: চাকসু নির্বাচনকে একাডেমিক ক্যালেন্ডারে অন্তর্ভুক্তিকরণ, সংস্কৃতি চর্চার জন্য একটি কালচারাল সেন্টার গঠন করা, মসজিদগুলোতে নারীদের জন্য আলাদা অযু ও নামাযের ব্যবস্থা করা, মাতৃত্বকালীন সময়ের জন্য অনুপস্থিতি বিবেচনা করে পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া ডে-কেয়ার সুবিধা শিক্ষার্থীদের সন্তানের জন্য উন্মুক্ত করা।
পুরো ক্যাম্পাসকে ফ্রি ইন্টারনেট সুবিধার আওয়তায় নিয়ে আসা, কেন্দ্রীয় খেলার মাঠকে স্টেডিয়ামে রূপান্তর করা, অলিম্পিক স্ট্যান্ডার্ড এর সুইমিংপুল নির্মাণ, এলামনাইদের সাথে বিশ্ববিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থীদের দৃঢ় সংযোগ স্থাপন এবং আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রসংসদ গুলোর ইউনিটি তৈরি করা।
নিরাপদ, স্বাস্থ্যসফাত ও সবুজ ক্যাম্পাস: ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্টে নিরাপত্তা চৌকি স্থাপন, সম্পূর্ণ ক্যাম্পাস সিসিটিভির আওতায় আনা, রাতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা। ময়লা ফেলার জন্য ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা। ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত ওয়াশরুম স্থাপনের ব্যবস্থা করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ওয়াশরুম সর্বদা পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ এবং তদারকি করা।
কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে ক্যাম্পাসে দ্বিচক্রযান (সাইকেল) ব্যবহারকে উৎসাহিত করা এবং জোবাইকের মত কোম্পানীগুলো ক্যাম্পাসে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জুলাইয়ে দুই বীর শহীদ হৃদয় চন্দ্র তরুয়া এবং ফরহাদ হোসেনের স্মৃতির সরণে ক্যাম্পাসে 'জুলাই স্মৃতি ম্যুরাল' নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
এসময় সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সহ-সাধারণ সম্পাদক (এজিএস) প্রার্থী পলাশ দে সহ অন্যান্য প্রার্থীরা।
সিটিজিপোস্ট/জাউ




