ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ আয়োজিত বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। এতদিন যেটি ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামে পরিচিত ছিল, সেটিকে এবার থেকে ‘বছর বরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামে ডাকা হবে।
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমেদ খান। তিনি জানান, “আনন্দ শোভাযাত্রার মূল থিম দুটি বার্তা বহন করে— একটি হলো কর্তৃত্ববাদী রাজনৈতিক ব্যবস্থার অবসান এবং অপরটি হলো বিকৃত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনতার স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ।”
নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক আজহারুল ইসলাম চঞ্চল বলেন, “আমরা নাম পরিবর্তন করিনি, বরং প্রথম শুরু হওয়া শোভাযাত্রার মূল নাম ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’কে ফিরিয়ে এনেছি।” তিনি বলেন, ১৯৮৯ সালের প্রথম শোভাযাত্রায় ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’ নামটিই স্বতঃস্ফূর্তভাবে ব্যবহৃত হয়েছিল। পরে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটি যেভাবে এসেছে, তা ছিল একধরনের চাপিয়ে দেওয়া সংস্করণ।
তিনি আরও বলেন, “মঙ্গল শব্দটি অতীতে কিছু স্বৈরাচারী শাসকদের দ্বারা নেতিবাচকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে, যার ফলে সমাজে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তাই আমরা আবার ফিরে যেতে চাই মূল চেতনায়, যেখানে সংস্কৃতি ছিল রাজনীতির মুখোশ নয়, বরং সাধারণ মানুষের মুক্ত স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের উৎসব।”
এ বছর শোভাযাত্রায় থাকছে সাতটি বিশাল আকারের মোটিফ— ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রতীকী মুখ, কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, শান্তির প্রতীক পায়রা, পালকি, পানির বোতল (পূর্ববতী আন্দোলনে নিহত মুগ্ধ ছাত্রের স্মরণে) ও প্যালেস্টাইনের প্রতি সংহতির প্রতীক তরমুজের টুকরো।
তরমুজকে প্যালেস্টাইন ও গাজায় প্রতিরোধের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়, কারণ এর রঙ ফিলিস্তিনি পতাকার রঙের সঙ্গে মিলে যায়। এবার এই প্রতীকটি আন্তর্জাতিক সংহতির চিহ্ন হিসেবে শোভাযাত্রায় স্থান পাচ্ছে।
এছাড়াও থাকছে—
এ বছর দেশের ২৮টি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ৪২৬ জন শিল্পী এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন। এর মধ্যে ম্রো, মারমা, লুসাই, বম, খিয়াং, চাকমা, তঞ্চঙ্গ্যা, ত্রিপুরা, সাঁওতাল, হাজং, মাহালি, রাজোয়ারসহ পাহাড়ি ও সমতলের বিভিন্ন গোষ্ঠী রয়েছে।
ঢাবির প্রক্টর অধ্যাপক সাইফুদ্দিন আহমেদ জানান, শোভাযাত্রা চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড় ঘুরে রাজু ভাস্কর্যের দিকে যাবে। সেখান থেকে শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমি হয়ে আবার চারুকলায় গিয়ে শেষ হবে।
তিনি আরও জানান, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ সদস্যরা শোভাযাত্রার দু’পাশে থাকবেন, তবে সামনে থাকবেন না। শোভাযাত্রার সময় শাহবাগ ও টিএসসি মেট্রো স্টেশন বন্ধ থাকবে। মৎস্যভবন ও বাংলামটর দিক থেকেও রাস্তা বন্ধ থাকবে। বিকাল ৫টার পর কেউ ঢাবি ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারবে না, তবে বাইরে যাওয়ার জন্য গেট খোলা থাকবে।