ঢাকামঙ্গলবার, ২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

ফায়ার সার্ভিস – বাস্তব জগতের সুপারহিরোরা…

Link Copied!

বিপদে না পড়লে বুঝা যায়না আমাদের চারপাশে কত সুপারহিরোদের ছড়াছড়ি। অথচ আমাদের মাতামাতি কিনা সবসময় রূপালী জগতের সুপারহিরোদের নিয়ে। ডিসি কমিকস, মার্ভেল কমিকস নিয়ে আমাদের জল্পনার শেষ নেই। কাল্পনিক জগতের সুপারহিরোরা আমাদের অনুপ্রাণিত করে ঠিক। কিন্তু যারা বাস্তবে, কোনো সুপারপাওয়ার ছাড়া কাল্পনিক হিরোদের ছাপিয়ে যান, তাদের আমরা ক’জন কদর করি!

 

যারা কর্তব্যপরায়ণ, অপরের জন্য নিজেদের বিলিয়ে দেন, নিজেদের প্রাণনাশের পরোয়া করেননা তারা সবাই সুপারহিরো। কিন্তু এমন কিছু গ্রেট হিরো আছেন, যারা প্রতিদিন মৃত্যুর সাথে লড়ে যান, আগুনের মুখ থেকে ছিনিয়ে আনেন বিপদগ্রস্তদের, সবশেষে চলে যান সবার আড়ালে, কারো মনের কোণায় ঠাঁই হয়না তাদের, আমরা সবাই ভুলে যাই এই অকুতোভয় যোদ্ধাদের। এমন যোদ্ধাদের অন্যতম এক দল হলো দমকল বাহিনী বা ফায়ার সার্ভিস বা ফায়ার ব্রিগেড।

আমাদের দেশে অন্যান্য নিরাপত্তা ও রক্ষী বাহিনীর বেশ নামডাক থাকলেও ফায়ার সার্ভিস সম্পর্কে তেমন নজর নেই।

আমাদের দেশে অন্যান্য নিরাপত্তা ও রক্ষী বাহিনীর বেশ নামডাক থাকলেও ফায়ার সার্ভিস সম্পর্কে তেমন নজর নেই। তাদের পেশাকে যথাযথ প্রাপ্য সম্মানটুকু প্রদর্শন করা হয় কিনা বলা দুষ্কর। জীবিকার তাগিদে হয়তো তাদের এই পেশা, কিন্তু পেশা যখন সরাসরি অন্যের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে যাওয়া, তখন তা আর তাগিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনা, তাদের উপর ভর করে অদৃশ্য সুপারপাওয়ার। সর্বশক্তি দিয়ে তারা লড়ে যান আগুনের বিরুদ্ধে। দগ্ধ, বিচূর্ণ কুঠির বা সাদামাটা ঘর কিংবা উঁচু দালান যাইহোক, যতক্ষণ না বিপদগ্রস্থ সবাই উদ্ধার হয়েছে ও আগুন নিভেছে ততক্ষণ পর্যন্ত সর্বশেষ দিয়ে তারা লড়াই করে যান। ঝলসে যায় তাদের দেহ, অনেক সময় বিচ্যুত হয়ে যায় তাদের কোনো অঙ্গ, তবু মৃত্যু আসলেও তারা থাকেন অটল- অবিচল।

 

সম্প্রতি চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় তাদের ভূমিকা ও আত্মত্যাগ আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমরা কতটা বেখেয়াল জাতি, উপকারীর স্মরণ আমাদের সেই উপকার গ্রহণকালীন সময় পর্যন্ত। অথচ তাদের এই আত্মত্যাগ আজকের নতুন নয়। তাদের প্রতিটি দিনই শুরু হয় তাদের মা, বাবা, ভাইবোন, স্ত্রী ও সন্তানদের হাসিমুখে শেষ বিদায় দিয়ে। এই শেষ বিদায় হয়তো তাদের চেহারা বা ভাষায় প্রকাশিত হয়না, কিন্তু মনের গভীরে ঠিকই বয়ে যায় সম্ভাব্য মৃত্যুর শিহরণ। তবুও সব বাধা পেরিয়ে অন্যের প্রিয়জনকে বিপদমুক্ত করে, নিজ প্রিয়জনের নিকট ফিরে আসেন তারা। প্রতিদানের আশায়, সম্মানের আশায় বসে থাকার সুযোগ হয়না। কর্তব্যের ডাকে সাড়া দিয়ে ছুটে যেতে হয় আরেক অগ্নিপরীক্ষায়, তারা থেমে থাকেননা, চলমান থাকে তাদের প্রতিদিনের বীরত্বগাঁথা। কিন্তু সে গাঁথা লিপিবদ্ধ হয়না, কেউ বলেনা এই কাজ গর্বের, এই পেশা গর্বের, খবরের কাগজে সামান্য স্থান হয়, তবে তা শুধু তাদের উদ্ধার ও মৃত্যু সংবাদ। সে বীরত্বপূর্ণ মৃত্যু সংবাদও উপস্থাপিত হয় বিশেষণবিহীন, আফসোস!

 

বিভিন্ন খাতে উন্নয়নের জোয়ার বয়ে গেলেও, ফায়ার সার্ভিসের মতো একটি নিবেদিত প্রতিষ্ঠান, যাদের প্রতিনিয়ত অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হতে হয়, তাদের যুগের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশিক্ষণ ও আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব থাকা খুবই দুঃখজনক।এদিকটাতে কতৃপক্ষ ও দেশের সরকারের অবশ্যই নজর দেয়া উচিত।

 

আসুন সবাই সীতাকুণ্ডের মর্মান্তিক দূর্ঘটনায় আক্রান্ত সকলের জন্য প্রার্থনা করি সৃষ্টিকর্তার নিকট। সর্বশক্তিমান যেনো সবাইকে ধৈর্য্য ধরার শক্তি দান করেন।