ঢাকারবিবার, ২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

“বিদায় কেকে” – মুহাম্মদ ইনজামাম খান

মুহাম্মদ ইনজামাম খান
জুন ৩, ২০২২ ১:০৭ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সংগীত জগতের আকাশ থেকে আরেকটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের বিদায়।

শোবিজ জগতে নীরব ও নিভৃত ছিলো পদচারণ কিন্তু নিজ দেশের গন্ডি পেরিয়ে কোটি শ্রোতার হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন সদ্যপ্রয়াত সংগীতশিল্পী কৃষ্ণকুমার কুণ্ণাত সংক্ষেপে ‘কে.কে.’ নামে ছিলেন অধিক জনপ্রিয়। হৃদয়নিংড়ানো কন্ঠের এই শিল্পী গান গেয়েছিলেন হিন্দি, তামিল, তেলেগু, কান্নাড়া, মালায়ালাম ও মারাঠি ভাষায়। তাঁর হিন্দি ভাষায় রচিত গানগুলো চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

 

তৎকালীন ভারত উপমহাদেশ বিভিন্ন রাষ্ট্রে বিভক্ত হয়ে গেলেও, উপমহাদেশীয় রাষ্ট্রগুলোর শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি এখনো সম্পূর্ণরূপে আলাদা হয়নি, আলাদা হওয়া সম্ভবও নয়। সুদীর্ঘ সময় ধরে গড়ে উঠা এই মেলবন্ধন মাত্র পঁচাত্তর বছরে মুছে যাওয়া অসম্ভব। তাইতো রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, শের ই বাংলা, মোহাম্মদ রফি, লতা মঙ্গেশকার, উস্তাদ নুসরাত ফতেহ আলী খান, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, বাপ্পী লাহিড়ী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও রুনা লায়লা প্রমুখ এখনো সবার। এই গুণীজনেরা মনে করিয়ে দেন শিল্প, সংস্কৃতি ও রক্তে আমরা এখনো এক।

 

সাংস্কৃতিক এই মেলবন্ধন বর্তমান সময়ে যাদের জন্য এখনো চলমান, তার মধ্যে অন্যতম ছিলেন কে.কে.।

সংগীতপ্রেমীরা তাঁর নাম দিয়ে কৃষ্ণকুমার কুণ্ণাতকে ভালোভাবে না জানলেও, তাঁর গানগুলো ছিলো সবার মুখে মুখে। প্রীতমের সাথে জুটি বেঁধে একের পর এক দিয়েছিলেন প্লেব্যাক হিট। ‘জারা সা’, ‘তুহি মেরি সাব হ্যায়’, ‘কিউ মুঝে পেয়ার হ্যায়’, ‘দিল ইবাদাত’ ও ‘খুদা জানে’ -এর মতো জনপ্রিয় গানগুলো জায়গা করে নিয়েছে সদ্য প্রেমে পড়া তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে ভালোবাসা পূজারী সকল ভক্তের মনে। কে.কে. ও তাঁর সৃষ্টি কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্রছাত্রীদের গানের আসর জমানোর অনুভূতির ও স্মৃতির অংশ।

 

গুরুদাস কলেজে নজরুল মঞ্চে কনসার্ট শেষ করে যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে অস্থির হয়ে কে.কে. ফিরে যান হোটেলে, সেখানে হোঁচট খেয়ে চোট পাওয়ার পর তাঁকে নিয়ে দ্রুত ছুটে যাওয়া হয় কলকাতা মেডিকেল রিসার্চ ইন্সটিটিউটে, কিন্তু জীবনের শেষ যুদ্ধে কে.কে. পেরে উঠেননি, হৃদকম্পন বন্ধ হয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট থামিয়ে দেয় সকলের ভালোবাসায় সিক্ত এই শিল্পীর পথচলা।

 

গান গাইতে গাইতে মৃত্যু, এর চাইতে একই সাথে ট্র‍্যাজিক এবং সম্মানজনক মৃত্যু যেনো একজন সংগীতশিল্পীর আর হয়না। সবাই বাঁচতে চায়, তাই অন্যজনের বিদায়ের যন্ত্রণাকে গোপন করতে ও মৃত্যুকে বিশেষণে বিশেষায়িত করা অনেকটা আমাদের নিজেদের স্বান্তনা দেয়ার মতো। হয়তো কে.কে. বাঁচতে চেয়েছিলেন, যখন কলকাতার গুরুদাস কলেজের নজরুল মঞ্চে ঘাম মুছতে মুছতে, নিজের অপারগতার সাথে লড়াই করতে করতে ভক্তদের জন্য সবটুকু দিয়ে গাইছিলেন, হয়তো ভেবেছিলেন আর সামান্য ই তো, এরপর শেষ। কিন্তু তিনি বুঝতে পারেননি এই শেষ হয়তো তাঁর শেষ মঞ্চে উঠা, জীবনের ও গানের শেষ মঞ্চ।এ যেনো মান্না দে’র “শেষ গান গাইলো সে পরে শেষ মালা”…