শেষ বিকেলে পাহাড় আর বনের মধ্যে কেমন একটা অপার্থিব সৌন্দর্যের বান ডাকে। অস্তায়মান সূর্যের সোনালী আলোটা যখন সবুজ বৃক্ষের চুড়াগুলো স্পর্শ করে, তখন একেকটি বৃক্ষকে মনে হয় গর্বিত ক্লিওপেট্রা। আমার শহরে যে পাহাড়গুলো আছে সেগুলোর উচ্চতা শখানেক ফুটের মতো। বড় পাহাড়ের সাথে তুলনা করলে ওগুলো বড়জোর টিলা। সেই অনুচ্চ পাহাড়গুলি আড়াল করে রেখেছে প্রাচীন কিছু বৃক্ষ। একসময় এই সব পাহাড় হিংস্র জীব জন্তুর আখড়া ছিল। মাত্র দুশো বছর আগেও এখানে আদিম জঙ্গল ছিল। শহরের ইতিহাস হাজার বছর হলেও এই পাহাড়গুলোতে মানব সভ্যতার বয়স খুব বেশী না।
আজ যা আমরা নজরুল চত্বর কিংবা ডিসিহিল নামে চিনি তা যে ইংরেজ শাসনামলে এক চাকমা রাজার বাড়ী ছিল তা কি আমরা জানি?
এটি একসময় চাকমা রাজার পাহাড় হিসেবে পরিচিত ছিল। তারো আগে এটা কোন এক জমিদারের মালিকানায় ছিল। তারও আগে কি ছিল সেটা এখন বলা মুশকিল। তবে পাহাড়ের একটা অংশে গোলাকার টাইলসের একটা কারুকার্যময় ঘরের অস্তিত্ব ছিল, যেটা জমিদারের নৃত্যশালা হতে পারে।
কিন্তু নজরুল চত্বর কি করে হলো এবং কেন হলো এই জায়গার নাম?
কারণ কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার জীবদ্দশায় এখানে প্রায়ই আসতেন অবসর কাটাতে। জাতীয় কবির এই আগমনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১০ এপ্রিল ২০০৫ সালে ডিসি হিলের নতুন নামকরণ করা হয় নজরুল চত্বর।
আরো অনেক গুণী ব্যক্তির পায়ের ধুলো ও পেয়েছে এই ডিসিহিল যেমন-ওয়াহিদুল হক, নির্মল মিত্র, মিহির নন্দী, অরুন দাশ গুপ্ত, আবুল মোমেন সুভাষ দে প্রমূখ।
১৯৭৮ থেকে এখন অব্দি সংস্কৃতির সাথে যেন আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে আমাদের এই ডিসিহিল। মঞ্চনাটক, উন্মুক্ত চলচ্চিত্র প্রদর্শনী,থিয়েটার সব কিছু মিলিয়ে এখনো চট্টগ্রামের সবচাইতে প্রানবন্ত জায়গার মধ্যে একটি ডিসিহিল।এটি চট্টগ্রামের সবচাইতে প্রাণবন্ত জায়গা।
ছোট হোক কিংবা বড় যেকোনো বয়সের মানুষই যেন সকল বিষন্নতা কাটিয়ে আড্ডায়,আনন্দে,খেলে,গেয়ে মেতে থাকে সকলে।