ঢাকাবুধবার, ২৫শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সেই ছেলেটা কি এখনো মনের আঙ্গিনাতে এক্কাদোক্কা খেলে!!

রুবাইয়াহ হক মৃত্তিকা
এপ্রিল ১১, ২০২২ ৫:১৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

সেই ছেলেটা কি এখনো মনের আঙ্গিনাতে এক্কা-দোক্কা খেলে!

সম্প্রতি দেখা গেছে ফুয়াদ আল মুক্তাদির তার ফেসবুক ওয়ালে, অর্ণব কে নিয়ে প্রশংসা মূলক স্ট্যাটাস আপলোড করেন এবং সাহানা বাজপাই তাতে কমেন্ট করেন।সাহানা বাজপাই এর এই এক কমেন্ট সাড়া তুলেছেন এখন ফেসবুক জগতে কিন্তু কেন?তাহলে আমরা ফিরে যাই তাদের সেই ছোটোবেলায়।
অর্ণব শান্তিনিকেতনে ক্লাস থ্রি’তে পড়ার সময় প্রেম বোঝার মতো বয়স না হলেও তুখোর বন্ধুত্ব হয় এক পুচকি মেয়ের সাথে। একদিন দুষ্টুমি করে তিনি হেড মাস্টারের জুতো চুরি করলেন। ক্লাসের মধ্যে দাঁড়িয়ে কানমলা খাচ্ছিলেন। এমন সময় শাহানা বাজপেয়ী নামের একটা পুচকি মেয়ে কে হঠাৎ দেখলেন। ব্যস হয়ে গেলো। নিজের মনটা বিনে শর্তে সবার অগোচরে শাহানাকে দিয়ে বসলেন। এতোটাই অগোচরে দিলেন যে শাহানা নিজেই জানলো না।
একটা বছর পেরুল কোনমতে। একদিন মৌহের বসে ‘বড় হলে আমি সাহানাকে বিয়ে করব’, অর্ণব তো বলেই বসলেন সাহানার এক বন্ধুকে!’

বলছি ভারতীয় বাংলা সংগীতশিল্পী শাহানা বাজপায়ীর কথা। তারপর আর কী… জেনে ফেলল সাহানা। ওই বয়সের মেয়েটি কী আর প্রেমের মর্ম বোঝে! বলে দিলেন স্যার কে। তো যা হয়, অর্ণবের কান ঝালাপালা হয়ে গেল বকুনিতে। তাতে কী ছোটবেলার বান্ধবী ক্লাস আট কিংবা নয়ে উঠতেই হয়ে গেল হৃদয়ের মানুষ। জমে গেল দুজনার প্রেম।
একটা সময় ভেবেচিন্তে ২০০১ সালে এসে বিয়েও করে ফেললেন তারা। ছোটবেলার কথা রাখলেন অর্ণব। চলছিল সংসার জীবন। অতঃপর হঠাৎ তাদের বিবাহ-বিচ্ছেদ ঘটে বিবাহের ৭ বছর পর ২০০৮ সালে। অর্ণব বললেন,‘সাহানা তো আসলে আমার বন্ধু। আমরা একসঙ্গে শান্তিনিকেতনে ক্লাস থ্রি থেকে পড়েছি। খুব অল্প বয়সে বিয়ে করি আমরা। সাত বছরের বিবাহিত জীবন। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের চাওয়া, পাওয়া তো পাল্টায়। সাহানা লন্ডনে পড়াশোনা করতে যায়। ও এখন বিবাহিত। কিন্তু আমরা পরস্পরের বন্ধুই আছি।’
সাহানা অর্জন করেছেন শিক্ষা, ডিগ্রি, সম্মান, চাকরি, বন্ধুত্ব। এবং রোহিণী। ব্রিটিশ স্বামীর সঙ্গে ছোট্ট মেয়ের দেখভালের দায়িত্ব ভাগ করে নিয়েছেন। সংসার, গান, মেয়েকে সামলানো— এসবের পরেও কিছু একটা থেকে যায়, যা বাউন্ডুলে সাহানাকে স্থির করেছে। কোথাও কারও জন্য থামতে শিখেছেন। একদিন যে মেয়ে দেশ-পরিচিতি-খ্যাতি ছেড়ে যেতে ভয় পাননি একবিন্দু, আজ তাঁর পিছুটান তৈরি হয়েছে।
তখন একসঙ্গে প্রচুর কাজ করেছেন তারা। সাহানার গানের সঙ্গীতায়োজন করেছেন অর্ণব। আর অর্ণবের জন্য গান লিখেছেন সাহানা। ১৭ বছর বয়সে যে গানটা অর্ণব প্রথম রেকর্ড করেছিল, সেটাও ছিল সাহানারই লেখা। ‘একটা ছেলে মনের আঙিনাতে ধীর পায়েতে এক্কা দোক্কা খেলে… বন পাহাড়ী ঝর্না খুঁজে, বৃষ্টি জলে একলা ভিজে, সেই ছেলেটা আমায় ছুঁয়ে ফেলে…’ শান্তিনিকেতনেই গানটি ধারণ করা হয়েছিল।
যারা গানটি শুনেছেন তারা তো জানেনই ‘একটি ছেলে’ গানটির ছেলেটাই বা কে আর মেয়েটাই বা কে! না জানলেও এতক্ষণে নিশ্চয়ই বুঝে ফেলার কথা। একসঙ্গে সর্বশেষ কাজ করেছেন সাহানার ‘নতুন করে পাব বলে’ এ্যালবামে। সাহানার গলা অদ্ভুত ভাল। খানিকটা ছেলেমানুষী ভাব রয়ে গেছে, এবং একটুখানি বিষন্ন যেন। খুব মনোযোগে শুনতে থাকলে বুকের ভেতরে কোথাও যেন হুট করে ফাঁকা লাগা শুরু করে। কিছু গানের বিশেষ কিছু জায়গা বার বার শুনতে ইচ্ছে করে।
‘মোর ভাবনারে কি হাওয়ায় মাতাল …’, এখানে মাতাল বলে যে টানটা দেয় সাহানা, বার বার শুনতে ইচ্ছে করে। ‘আজ জ্যোৎস্না রাতে সবাই গেছে বনে’- গানটার শুরুতে বেশ খানিকক্ষণ মিউজিক বেজে চলে, এ কাজটাও অনেক সুন্দর। একেই বুঝি কম্পোজিশন বলে! সাহানার লেখা অর্ণবের যত গান, সবই জনপ্রিয়।
‘নতুন করে পাব বলে’র পর পেরিয়ে গেছে ১০টি বছর। নতুন করে আর পাওয়া হয়নি এর মধ্যে। অর্ণব-সাহানা জুটির শ্রোতারা অপেক্ষা করতে করতে কত নির্ঘুম রাত যে ডেকে এনেছেন, কত ভোর যে ম্লান করে দিয়েছেন; সেটা না হয় অজানাই থাকুক।

অনেকেরই ধারণা প্রাক্তন মানেই সম্পর্কটা খারাপ হতে হবে একে অপরের নিন্দে করবে


অর্ণবের সঙ্গে সাহানার সম্পর্কের শুরুটা বন্ধুত্ব দিয়েই। আজও তাই-ই আছে। গানের বন্ধুত্বও তাদের দীর্ঘদিনের। এই বন্ধুত্বটা থাকবে না, বা একসঙ্গে আর কাজ করা হবে না; এমন কোন বিশেষ পরিকল্পনাও নেই তাদের। সাহানাও মিডিয়াকে তাই-ই জানিয়েছিলেন।তাদের জুটির রসায়নটা তো বহু আগে থেকেই শ্রোতাদের মনদর্পণে আটকে আছে, থাকুক না আরও কোটি বছর! তাতে কারইবা কী এমন ক্ষতি হবে …