রাজধানীর উত্তরার বাসিন্দা নূর মোহাম্মদ মামুনের সকালটা আজ ছিল অন্য দিনের তুলনায় আলাদা। ছোট মেয়ে মেডিকেলের ভর্তি পরীক্ষা দিতে যাবে। পরীক্ষার কেন্দ্র রাজধানীর মোহাম্মদপুরে। যানজটে যেন না পড়তে হয়, সেজন্য রাতেই বলে রেখেছিলেন সকাল সকাল বের হবেন।
সকালে ছোট মেয়েকে নিয়ে বের হওয়ার সময় বড় মেয়ে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাইশা মমতাজ মিম বাবাকে বললেন তিনিও বের হবেন। ভার্সিটিতে যেন কী কাজ আছে। সকাল সাতটার দিকে মামুন ও তার দুই মেয়ে বাসা থেকে বের হন। মিম নিজের স্কুটি নিয়ে রওনা হন ভার্সিটির উদ্দেশে। আর বাবা মামুন ছোট মেয়েকে নিয়ে সিএনজিতে করে রওনা হন মোহাম্মদপুর উদ্দেশে।
মেয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে প্রবেশ করলে মামুন বাইরে অপেক্ষায় ছিলেন। এমন সময় তার কাছে হঠাৎ ফোন আসে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল থেকে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলা হয়, ‘আপনার মেয়ে সড়ক দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছেন। আপনি দ্রুত আসুন’। খবর শুনে আঁতকে ওঠেন মামুন। ছোট মেয়েকে পরীক্ষা কেন্দ্রে রেখেই দ্রুত সিএনজিতে চলে আসেন হাসপাতালে।
মামুন হাসপাতালে এসে দেখেন তার বড় মেয়ে মিমের নিথর দেহ পড়ে রয়েছে। মেয়ের মরদেহ দেখে আর স্বাভাবিক থাকতে পারেননি, সঙ্গে সঙ্গে অচেতন হয়ে লুটিয়ে পড়েন হাসপাতালের ফ্লোরে।
শুক্রবার রাতে ঢাকা পোস্টকে ঘটনার বিবরণ শোনান সড়কে নিহত মিমের ফুফাতো ভাই অ্যাডভোকেট মো.জাকির হোসেন খান। তিনি বলেন, আমার মামার জীবন তার দুই মেয়েকে কেন্দ্র করে। বড় মেয়েকে নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। আজ এ দুর্ঘটনায় মামার পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মামার গাজীপুরে একটি স্কুল রয়েছে। তিনি পরিবার নিয়ে উত্তরায় বসবাস করতেন।
সকাল সাড়ে সাতটার দিকে কুড়িল ফ্লাইওভারে গাড়িচাপায় নিহত হন মিম। তার ফুপাতো ভাই বলেন, সকাল দশটার দিকে মামার কাছে মিমের দুর্ঘটনার খবর আসে। মামা মোহাম্মদপুর থেকে হাসপাতালে এসে মেয়ের মরদেহে দেখে সঙ্গে সঙ্গে অচেতন হয়ে পড়েন। তার শরীরে ডায়বেটিসসহ নানা সমস্যা রয়েছে। মেয়ের মরদেহ দেখে তিনি আর সহ্য করতে পারেননি। পরে তাকে দ্রুত কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি হাসপাতালে ছিলেন। রাতে গাজীপুর যাচ্ছেন মেয়েকে দাফন করতে।
জাকির হোসেন খান বলেন, মামার গ্রামের বাড়ি গাজীপুর। আমরা এখন মিমের মরদেহ গাজীপুর নিয়ে যাচ্ছি, সেখানে তাকে দাফন করা হবে। দাফন কাজ শেষে পারিবারিক আলোচনা করে মামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে আমরা যতদূর জানতে পেরেছি একটি কাভার্ড ভ্যানের ধাক্কায় মিম নিহত হয়।
এদিকে দুর্ঘটনার বিষয়ে খিলক্ষেত থানার উপ-পরিদর্শক সজল ঢাকা পোস্টকে বলেন, সকালে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ এর মাধ্যমে মিমের দুর্ঘটনার খবর পাই। খবর পেয়ে আমরা কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে জানতে পারি দুর্ঘটনায় মিম মারা গেছে। পরে তার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ঘটনাস্থলের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ আমরা বিশ্লেষণ করেছি। সিসিটিভি ফুটেজ আমরা দেখেছি, দুর্ঘটনাস্থলে মিম ও তার স্কুটির পাশ দিয়ে একটি কাভার্ডভ্যানকে দ্রুত চলে যেতে। আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি কাভার্ডভ্যানটি মিমের স্কুটিকে ধাক্কা দেওয়ায় দুর্ঘটনাটি ঘটেছে। সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে কাভার্ডভ্যানটির নম্বর প্লেট শনাক্ত করেছি। ভ্যানচালক ও ভ্যানটিকে আটক করার জন্য ইতিমধ্যে আমাদের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এ বিষয়ে থানায় এখনো কোনো মামলা করতে পরিবারের কেউ আসেনি। তবে মামলা না হলেও আমাদের স্বাভাবিক তদন্ত কাজ চলছে।
সকাল সাড়ে সাতটার দিকে একজন পথচারী মিমকে রাস্তায় আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।