বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো মানুষের রক্তে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এক পরীক্ষায় প্রায় ৮০% মানুষের রক্তে এই ক্ষুদ্র কণা খুঁজে পেয়েছেন তারা।
বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) এক প্রতিবে ওরদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান। নতুন এই গবেষণা এনভায়রনমেন্ট ইন্টারন্যাশনাল জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষণার ফলাফলের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা মানুষের শরীরে চলাচলে সক্ষম এবং সেগুলো বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে জায়গাও করে নিতে পারে। তবে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব সম্পর্কে এখনও জানতে পারেননি বিজ্ঞানীরা।
যদিও ইতোমধ্যে বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে দেখেছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিক মানবকোষের ক্ষতি করে। তারা বলছেন, বায়ুতে থাকা দূষিত কণাগুলো মানুষের শরীরে প্রবেশ করছে এবং ফলে বছরে কয়েক লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ প্লাস্টিক বর্জ্য পরিবেশে ফেলা হচ্ছে। মাউন্ট এভারেস্টের চূড়া থেকে গভীরতম মহাসাগর পর্যন্ত মাইক্রোপ্লাস্টিক এখন পুরো পৃথিবীকেই দূষিত করছে। এরইমধ্যে খাবার ও পানীয়ের পাশাপাশি নিঃশ্বাসের সঙ্গে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা গ্রহণ করছে মানুষ। শিশু ও প্রাপ্তবয়স্কদের মলে এই কণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে।
এ গবেষণায় বিজ্ঞানীরা ২২ জন অজ্ঞাত রক্তদাতার নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন। তারা সবাই সুস্বাস্থ্যবান ও প্রাপ্তবয়স্ক। গবেষণায় তাদের মধ্যে ১৭ জনের শরীরে প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি শনাক্ত হয়। অর্ধেক নমুনায় পিইটি প্লাস্টিক পাওয়া গেছে, যা সাধারণত পানীয়ের বোতলগুলোতে ব্যবহৃত হয়। এক-তৃতীয়াংশের নমুনায় পলিস্টাইরিন পাওয়া গেছে, যা খাবার ও অন্যান্য পণ্য প্যাকেজিংয়ে ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এক চতুর্থাংশ রক্তের নমুনায় পলিথিন শনাক্ত হয়েছে।এ প্রসঙ্গে নেদারল্যান্ডসের ভ্রিজ ইউনিভার্সিটি আমস্টারডামের ইকোটক্সিকোলজিস্ট অধ্যাপক ডিক ভেথাক বলেন, “মানুষের রক্তে যে পলিমার কণা রয়েছে এটির প্রথম ইঙ্গিত হলো আমাদের এই গবেষণা। এটি একটি যুগান্তকারী ফলাফল। তবে আমাদের গবেষণাকে প্রসারিত করতে হবে এবং নমুনার আকার, মূল্যায়ন করা পলিমারের সংখ্যা ইত্যাদি বাড়াতে হবে।”
কয়েকটি দল এ বিষয়ে আরও গবেষণা করছে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক ভেথাক বলেন, “মানুষের শরীরে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা রয়েছে এবং সেগুলো পুরো শরীরজুড়ে চলাচল করছে। বিষয়টি খুবই উদ্বেগজনক।”
তিনি আরও বলেন, “ইতোপূর্বে এক গবেষণায় প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের মলে প্রায় ১০ গুণ বেশি মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। যেসব শিশুকে প্লাস্টিকের বোতলে খাওয়ানো হয় তাদের শরীরে প্রতিদিনই কয়েক লাখ মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা প্রবেশ করছে।”