ঢাকাশুক্রবার, ১৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

মা মানেই টেনশন করা!

তাহিয়া আহমেদ চৌধুরী | সিটিজি পোস্ট
মার্চ ৪, ২০২২ ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

তাহিয়া আহমেদ চৌধুরী:

মা হলো পৃথিবীর একমাত্র ব্যাংক যেখানে আমাদের দুঃখ কষ্ট জমা রাখি বিনিময় নিই বিনা সুদে অকৃত্রিম ভালোবাসা – হুমায়ূন আহমেদ

 

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও মধুর শব্দ হল ‘ মা ‘। এই মা শব্দে মনে হয় এক ধরনের শান্তি বিরাজ করে। পৃথিবী যেন মা তে শুরু মা তেই শেষ। একটি প্রবাদ বাক্য আছে মায়ের মত আপন দুনিয়াতে কেউ হয়না। মায়ের ভালোবাসার সাথে তো অবশ্যই কারো ভালোবাসা তুলনা হবে না।
মা নিয়ে যদি লেখালেখি করলে তা কয়েকটা বই লিখে ফেললেও শেষ করা যাবেনা। তাই আজকের প্রতিবেদনে একটি বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করবো তা হলো মায়ের টেনশন, দুশ্চিন্তা।
মায়ের ভালোবাসাটা যেমন বেশি তার টেনশন টাও তেমন অনেক বেশি। কথায় আছে না আমরা যাকে ভালোবাসি তার জন্য টেনশনটা, চিন্তা ও করি বেশি বেশি। মা আমাদের যেমন ভালোবাসেন তেমন আমাদের জন্য টেনশনও করেন বেশি।

একজন মা তার গর্ভে যখন সন্তানের ভ্রূণ সৃষ্টি হয় তখন থেকেই তিনি চিন্তায় থাকেন তার সন্তানের জন্য। এই ভ্রুণ সৃষ্টি থেকে যে একজন মায়ের চিন্তা শুরু হয়, আর এই চিন্তা টেনশন পৃথিবীতে ততদিন চলতে থাকে যতদিন পৃথিবীতে বেঁচে থাকেন।

ctgpost এর প্রতিবেদক আমার বন্ধু ইশাত ও আমার মায়ের সাথে কথা বলি। তাদের থেকে থেকে কিছু কারণ জানতে পারি যে তাদের কেন এতো দুশ্চিন্তা হয় তাদের সন্তানদের নিয়ে।

 

প্রশ্ন ১ঃ মায়ের দুশ্চিন্তা কখন বেশি হয়?

উত্তর: সন্তান গর্ভে আসার থেকেই তো চিন্তা শুরু হয়, জন্মের পর থেকে কত কষ্ট কত দুশ্চিন্তা করে তাতো বলে শেষ করা যাবে না। জন্মের পর থেকে বাচ্চাকে খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো, রাত জেগে বাচ্চার জন্য চিন্তা, তাকে মানুষ করার চিন্তা, তাকে শারীরিক, মানসিক ভাবে গড়ে তোলার চিন্তা তো একজন মায়ের মনে লেগেই থাকে।
মায়ের চিন্তার শেষ নাই। সেই ছোট বেলা থেকে যখন দুই বাচ্চার দুই ব্যাগ কাধে নিয়ে স্কুল এ যেতাম তখন চিন্তা হতো কেউ আমার বাচ্চা কে নিয়ে যাবে কিনা,আমার বাচ্চা কারো কাছ থেকে উলটা পালটা কিছু খেলো কিনা?ঠিকমতো বসল কিনা বাসায় আসলো কিনা, পড়াটা ঠিক মত হলো কি না, খেলতে গিয়ে বেথা পেলো কিনা, কারো সাথে ঝগড়া করলো কিনা আবার ইত্যাদি আরো অনেক চিন্তা। আস্তে আস্তে যখন বড় হয় তখন আবার অন্য রকম চিন্তা। বয়সন্ধিকাল চলাকালীন মায়ের চিন্তা তো আরও বেড়ে যায়। সন্তান কার সাথে মিশছে, কার সাথে খেলছে কোথায় যাচ্ছে? এই সময় টাতে ছেলেমেয়েরা একটু রাগারাগি করে তাদের রাগ এর জন্য চিন্তা।কথা শুনতে চাইনা, বুঝতে চাইনা,সবকিছু তে দুঃসাহসিক আচরণ মায়ের মন কে আরও নাড়া দেয়। তরুণ বয়সে ছেলেমেয়েদের নিয়ে আবার আরেক রকম চিন্তা। তাদের অতিরিক্ত আবেগের বসে কোনো খারাপ কাউকে পছন্দ করে ফেললো কিনা। ঠিকমতো গ্রেজুয়েশন শেষ করে একটা ভালো চাকরি এর ব্যাবস্থা করতে পারা, ছেলে মেয়েরা দরজা বন্ধ করে বসে থাকে ভিতরে কি করে সেই টেনশন,দরজা বন্ধ করলেও টেনশন না করলেও টেনশন, ঘুমালেও টেনশন না ঘুমালেও টেনশন, ঘরের বাহিরে গেলেও টেনশন না গেলেও টেনশন,আর মোবাইল টা তো এসে মায়ের মনের টেনশন আরো বাড়িয়ে দিল কয়েক গুন। ছেলেমেয়ে ভালো মানুষ হতে পারলো কিনা এটাও অনেক বড় টেনশন ইত্যাদি। এরপর যদি যুবক যুবতি বয়সের কথা বলি তাহলে তাদের একটা বিয়ের চিন্তা, তাদের জীবন টাকে গুছিয়ে দেয়া,তাদের সংসার জীবন ভালো আছে কিনা, তাদের চাকরি, ব্যবসা জীবন ঠিকঠাক আছে কিনা, আমার ছেলে বা মেয়েটা সৎ পথে আছে কিনা ইত্যাদি আরো কত কি। মায়ের চিন্তার কথা কি আর বলে শেষ করা যায়? শুধু কি এসবই চিন্তা করি? আরো কত হাজার হাজার চিন্তা করে একজন মা, এইসব চিন্তার শেষ নেই।

 

প্রশ্ন ২:. এসব চিন্তা দমানোর কোন উপায় কি আছে মা?

উত্তর : না নেই। মা মানেই টেনশন। সৃষ্টিকর্তা মনে হয় মা দের চিন্তা করার জন্যই পৃথিবী তে পাঠিয়েছেন হা হা। তবে সন্তান রা যদি বাবা মার কথা শুনে আদেশ নিষেধ মানে তাহলে কিছুটা রেহায় পাবে মায়েরা টেনশান থেকে। আগে আমাদের মায়েরা আমাদের জন্য চিন্তা করতেন এখন আমাদের বাচ্চাদের জন্য আমরা করি তারপর আমাদের বাচ্চারা তাদের সন্তানদের জন্য চিন্তা করবে। এটা চলতে থাকবে। মায়েরা চিন্তা করবেই।

 

বিশ্বাস করুন মায়েরা সন্তানের ভালো চান তাই সারাক্ষণ ছেলেমেয়েদের জন্য চিন্তা করতে থাকে। পৃথিবীর বুকে নিরাপদ আশ্রয় মা। মা মানেই শান্তি মা মানেই সুখ মা মানেই নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। তাই তাদের যত কম দুশ্চিন্তা দেওয়া সম্ভব তত কম দেওয়াই ভালো। তাদের জীবনের চাওয়া পাওয়া সব আমাদের সন্তানদের নিয়েই।
তাই মায়েদের ভালোবাসুন।

ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল টেনশন করা মায়েরা।