বাংলা বাংলাদেশের রাষ্ট্রভাষা। সেই সঙ্গে দেশের সবচেয়ে বড় জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা। তবে একমাত্র মাতৃভাষা বাংলা নয়। বাংলা ছাড়াও দেশে রয়েছে আরো প্রায় ৪০টি ভাষা। এদের মধ্যে পাহাড় ও সমতল অঞ্চলে রয়েছে প্রধান কয়েকটি ভাষা।
অনেকেই ধারণা করেন সমতলে সবাই বাংলায় কথা বলে। আর পাহাড়ে প্রচলিত অন্যান্য মাতৃভাষা। আসলে দেশের পাহাড় ও সমতলে ভাষা রয়েছে বেশ কটি। এসব ভাষায় কথা বলেন দেশের কয়েক কোটি মানুষ। বাংলা ছাড়া সমতলের তিনটি প্রধান ভাষা হল সাঁওতালি, রংপুরি ও সিলেটি।
সাঁওতালি অস্ট্রো -এশীয় ভাষা পরিবারের অন্তর্গত মুন্ডা উপপরিবারের একটি ভাষা। বাংলাদেশে ২ লক্ষ ২৫ হাজার মানুষ এই ভাষায় কথা বলে। সাঁওতালির আছে নিজস্ব লিপি, যার নাম অলচিকি।
রংপুরি ভাষাভাষীরা কার্যত দ্বিভাষী। বাংলাদেশে ভাষাটি রংপুরী, কামতাপুরী, রাজবংশী নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের রংপুর, দিনাজপুর এবং ঠাকুরগাঁও প্রচলিত ভাষাটি।
বাংলা ভাষার একটি সমৃদ্ধ উপভাষা সিলেটি। এর ইতিহাসও সুপ্রাচীন। আছে আলাদা লীপি – সিলেটি নাগরী। ২০২০ সালে কানাডাভিত্তিক ওয়েবসাইট ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্টে প্রকাশিত বিশ্বের ১০০টি কথ্য ভাষার তালিকায় উঠে আসে সিলেটি ভাষা।
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলা এবং কক্সবাজার জেলার মানুষেরা চাঁটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলে। ১ কোটি ৩০ লাখ কথ্য ভাষাভাষী মানুষ নিয়ে বিশ্বের ১০০টি কথ্য ভাষার তালিকায় এর অবস্থান ৮৮তম।
পাহাড়ের আছে ৫ লাখেরও বেশি চাকমা ভাষাভাষি। দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশ ও আশাপাশের ভারতীয় এলাকায় প্রচলিত এ ভাষা। চাকমা ভাষার আছে নিজস্ব লিপি।
গারো ভাষার আরেক নাম মান্দি ভাষা। গারো ও মেঘালয় পাদদেশের জেলাগুলোতে প্রচলিত এই ভাষা। গারো ভাষা এখন বাংলা বর্ণমালায় লেখা হয়।
পাহাড় আর সমতলের প্রধান ভাষাগুলো ছাড়াও অনেক ভাষারই নেই লিখিত রূপ। বর্ণমালা কিংবা চর্চার অভাবেও, হারিয়ে যাওয়ার হুমকিতে অনেক ভাষা।
তাইতো এই ভাষাগুলো আমাদের সম্পদ, আমাদের এই ভাষাগুলো কে সংরক্ষিত করতে হবে, ছড়িয়ে দিতে হবে। সম্মান করতে হবে।
মনে রাখতে হবে মাতৃভাষার জন্য জীবন দেওয়ার জাতি আমরা। তাই সকল মাতৃভাষাকে সম্মান দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।